সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানকে এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে গত ১১ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আজ দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক আদালতে হাজির হন। তিনি আদালতকে জানান, তিনি তদন্তভার নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ৭০ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। তদন্ত চলছে। আশা করা যায়, খুব শিগগির তদন্ত শেষ হবে।
এ সময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, আদালত আপনার তদন্তে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর আদালত আগামী ৩০ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১২১ বারের মতো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হলো।
আদালতের শেরেবাংলা নগরের সাধারণ নিবন্ধন কার্যালয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর র্যাবকে সরিয়ে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেন হাইকোর্ট। এরপর এই মামলায় নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ওরফে সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার ওরফে মেহেরুন রুনি দম্পতি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় খুন হন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে। চার দিনে কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় মামলার তদন্ত পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। কিন্তু তারাও রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল র্যাব তদন্তভার গ্রহণ করে। ৯ বছরেরও বেশি সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি কোনো সংস্থা। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্যই উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্য উদ্ঘাটনের ফলাফল শূন্যই থাকে। তদন্ত সংস্থা মাঝে মাঝে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানায়, রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে। তদন্ত সংস্থার ওই ধরনের প্রতিবেদনের ভেতরেই মামলার তদন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করে পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া মামলার বাদী ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগ করেন।
তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের পরে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। সংস্থাটি বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক নৌবাহিনী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল এবং মামলার আসামি হুমায়ুন কবির, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর রহমানসহ ৭০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
উল্লেখ্য, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন কামরুল ইসলাম ওরফে অরুণ, আবু সাঈদ, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, পলাশ রুদ্র পাল, আনামুল হক ওরফে হুমায়ুন কবির ও তানভীর রহমান খান। বর্তমানে তানভীর ও পলাশ জামিনে এবং অন্যরা কারাগারে আছেন।