ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটের নিচে এক রোগীর অর্ধগলিত লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের ১০ তলা ভবনের ২ নম্বর লিফটের নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করে।
নিহত ব্যক্তির নাম রাজু মাতুব্বর (৪২)। তিনি বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত শহীদ মাতুব্বরের ছেলে। তিনি ১৫ জুলাই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন বলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও রাজুর প্রতিবেশী মুরাদ শেখ জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে স্ত্রী রাজুকে ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে তিনি একধরনের মানসিক সমস্যায় ছিলেন। তাঁর মা-বাবাও নেই। কয়েক দিন আগে একজনের সঙ্গে মারামারি করে তিনি একাই গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর সঙ্গে কেউ ছিল না।
রাজুর লাশ পাওয়ার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর আজকের পত্রিকাকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ওই লিফট দিয়ে লিফট মেরামতের মালপত্র নিয়ে ওপরে উঠছিলেন মেকানিক ও একজন ওয়ার্ড মাস্টার। তখন তাঁরা দুর্গন্ধ পান। পরে লিফটের নিচের অংশ খুলে পানিতে একটি লাশ ভাসতে দেখেন। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে জানালে রাতেই তা পুলিশকে অবহিত করা হয়। পুলিশ আজ দুপুরে লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
লিফটে ত্রুটির কারণে কোনো দুর্ঘটনার ফলে এ ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করছে। এটি পুলিশের বিষয়।’
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশের সঙ্গে থাকা একটি কাগজ দেখে পরিচয় বের করা হয়। পরে পরিবারকে জানানো হলে তাঁরা লাশটি শনাক্ত করেন। এ নিয়ে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে হাসপাতালের ১০ তলা ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য উন্মুক্ত থাকা পাঁচটি লিফটের মধ্যে দুটি সচল রয়েছে। বাকি তিনটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ। তবে সচল থাকা লিফটগুলোও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে যায় বলে সেবাপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেন।
একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি লিফট নষ্ট। এ জন্য মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এ নিয়ে হাসপাতালের কারও মাথাব্যথা নেই। এমন দিন নেই যে, মানুষ লিফটের কারণে ভোগান্তিতে না পড়ে।
এ নিয়ে কথা হলে হাসপাতালে পরিচালক বলেন, ‘দুই বছর ধরে এই ভবনের একাধিক লিফট মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যায়। সব সময় আতঙ্কে থাকি কখন কী ঘটে। বিষয়টি গণপূর্ত অধিদপ্তরকে কয়েকবার জানিয়েছি; কিন্তু তারা আগে সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে লিফট মেরামতের জন্য গতকাল কিছু মালপত্র আসে। সেগুলো উঠানোর সময়ই লাশটি পাওয়া যায়।’