জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়া পদত্যাগ করেছেন। দলের প্রধানের কাছে দেওয়া এই পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না, কিংবা কোনো সরাসরি অভিযোগ তুলতে চাই না। তবে সত্য হলো–আমি আমার বিবেক, সততা এবং নীতিকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে চাই না।’
দলীয় প্রধানের কাছে পাঠানো এ পদত্যাগপত্র আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে সাংবাদিকদের পড়ে শোনান শামীমা সুলতানা মায়া।
গত আগস্টে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে দলীয় প্রধানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন শামীমা সুলতানা মায়া। তবে এসবের কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন।
শামীমা সুলতানা মায়া রাজশাহীর একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি এনসিপিতে পদ পাওয়ার পর তাঁর কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের শপথ গ্রহণের দিন এসব ছবি সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনীর সঙ্গে তোলা ছিল। ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে এসব ছবি পোস্ট করে শামীমা সুলতানা মায়াকে ‘আওয়ামী দোসর’ হিসেবে মন্তব্য করা হয়।
পদত্যাগের আগে দলের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো পত্রে শামীমা সুলতানা মায়া লিখেছিলেন, ‘আমি আগে কখনো কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নোংরা কমেন্ট (মন্তব্য) করা হয়েছে, সেখানে আমি নির্দোষ হওয়ার সত্ত্বেও দলীয়ভাবে কোনো সমর্থন ও সহযোগিতা পাইনি। আমি সামাজিক ও ব্যবসায়িক সব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
শামীমা সুলতানা মায়া অভিযোগ করেন, ‘এনসিপির জেলা ও উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করছে মহানগর কমিটি। জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব কাজ মহানগর কমিটি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং যারা জেলা কমিটিতে আছি, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। প্রশাসনিকভাবে কোনোই সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছি না। রাজশাহীতে একটি পক্ষ এনসিপিকে পক্ষভুক্ত করার অপচেষ্টা করছে এবং সব ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে অপমান-অপদস্থ করছে।’
এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন মায়া। এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগপত্রে মায়া উল্লেখ করেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচার এবং নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি, এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে।’
গত ১৮ জুন এনসিপির জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ জুন অভিযোগ ওঠে, জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমকে লাথি মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। পর দিন জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এদিকে ফিরোজ আলমকে লাথি মারার ঘটনায় নাহিদুলকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হলেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজুকে কয়েকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে তিনি তা ধরেননি।
এনসিপির রাজশাহী মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী জেলা কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা কমিটির মায়া, ফিরোজ আলম ও সাইফুল ইসলাম নামের তিনজনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। তাই দুই দিন আগে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাঁদের দল থেকে সরানো না হলে জেলা ও মহানগরের অন্য সবাই একযোগে পদত্যাগ করব। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগ লেখা হচ্ছে। এটি জানতে পেরে মায়া আগাম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।’