ফরিদপুরে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আজকের পত্রিকাকে পুলিশ বলেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি ছিনিয়ে নিতে যুবককে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আর ব্যাটারি বিক্রির টাকায় মাদক সেবন এবং কিস্তির টাকা শোধ করেন আসামিরা।
গত ২৮ আগস্ট ফরিদপুর পৌরসভার দক্ষিণ কোমরপুর এলাকায় সড়কের পাশে জঙ্গলের মধ্যে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে ওই দিন বিকেলে লাশটি উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। এ ঘটনার পর ৩০ আগস্ট একটি মামলা করেন উপপরিদর্শক জ্যোতিময় মল্লিক।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদপুর জেলা সদরের বৈঠাখালী এলাকার বিল্লাল শেখের ছেলে রিয়াজ শেখ (২৩) ও হারুন দেওয়ানের ছেলে মারুফ দেওয়ান (২৭)। এ ছাড়া ব্যাটারির ক্রেতা কানাইপুরের ইলিয়াস শেখ (৪০) ও বোয়ালমারী উপজেলার ভাটদি এলাকার লুৎফর ফকির (৩৫)। গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হিরামন বিশ্বাস। আজ সোমবার বিকেলে আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান।
ঘটনাটি নিয়ে কথা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিরামন বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানান, ঘটনার ৪ দিন পর (২ সেপ্টেম্বর) লাশের শরীরে পরিধানের পোশাক দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন। এর আগেই লাশটি পচে যাওয়ায় আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়। পরিবারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, লাশটি মাগুরা জেলা সদরের ছোনপুর এলাকার সৈয়দ আলী মোল্যার ছেলে ওমর ফারুকের (৩১)। তিনি ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের খোদাবক্স সড়ক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। এ ছাড়া রিকশার সূত্র ধরে পরিচয় বের করা হয় বলেও দাবি করেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পরিবার লাশটি শনাক্তের দাবি করলেও ডিএনএ প্রতিবেদনের পর সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য তথ্যপ্রযুক্তি, একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান হিরামন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ২৪ আগস্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন ওমর ফারুক। ওই দিন বেলা ৩টার দিকে হেলিপোর্ট বাজার এলাকা থেকে ওমর ফারুকের রিকশাটি ঘুরার জন্য ভাড়া করেন আসামি মারুফ হোসেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দক্ষিণ কোমরপুর পৌঁছায় রিকশাটি। সন্ধ্যা হওয়ায় রিকশাটি ছিনিয়ে নিতে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তখন একটি ভ্যান নিয়ে রিকশাটির পেছনে আসেন রিয়াজ শেখ। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রিয়াজ ভ্যানে থাকা রশি দিয়ে ওমর ফারুকের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে চলে যান।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আসামিরা মৃত্যু নিশ্চিত করে পাশের ডাকাতিরবিল এলাকায় রিকশাটি ফেলে রেখে ব্যাটারি নিয়ে চলে যান। পরে কানাইপুর বাজারে গিয়ে ১১ হাজার ৮০০ টাকায় ব্যাটারি বিক্রি করে সমানভাবে ভাগ করে নেন। সেই টাকা দিয়ে রিয়াজ মাদক সেবন করেন এবং রিয়াজ কিস্তি দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। হিরামন বিশ্বাস বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় প্রথমে রিয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যানুসারে ৬ সেপ্টেম্বর অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।