ডুমুরিয়ায় উপজেলায় টানা ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকের কাঁচা ফসল ও হাজার হাজার মাছের ঘের।
মঙ্গলবার ২৯ জুলাই সকালে ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ও কাঁচা রাস্তায় হাঁটুপানি জমে আছে। অনেক দোকানপাট, বাজারের রাস্তা ও বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে এর আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস থেকে বলেন, আরও কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
টানা বৃষ্টির কারণে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া শোভনা, ডুমুরিয়া, গুটুদিয়া সাহসসহ ১৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে মাছের ঘের,আমন ধানের বিজতলা, সবজি ক্ষেত, মাছের ঘের, পুকুর, কাঁচা রাস্তা, গবাদিপশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে,ও নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খর্নিয়া ইউনিয়ানের প্রশাসক চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের খর্নিয়া কচুরিপানা থাকার কারণে সুইস গেট দিয়ে পানির সরবরাহ করতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে সে কারণে এলাকায় আমন ধানের বিজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত রাখা জমিও এখন থমথমে পানির নিচে। সবজির খেতেও হাঁটুপানি জমে আছ।
ডুমুরিয়া বাজার কীটনাশক ব্যবসায়ী মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ছোট মাছের ঘেরের ভেড়ি (বাঁধ) ভেঙে মাছ বেরিয়ে গেছে। বড় বড় ঘেরের অবস্থাও টলমল। যে কোনো সময় ভেড়ি ভেঙে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এবারও অতিবৃষ্টির কারণে ডুমুরিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার সাংবাদিক এস, রফিক বলেন আমাদের ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের পশারী বাড়ীর বিল,কুড়ির বিল, শিবপুর বাদুর গাছা বিল, বালুই ঝাকি বিলসহ এলাকার নিম্নঅঞ্চল তলিয়ে গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার লেবু চাষী খলিল বিশ্বাস বলেন, সরকারি নানা প্রকল্পে কালভার্টগুলো সচল রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবে অধিকাংশ কালভার্ট বন্ধ থাকে। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমিটি পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শোভনায় নদী খনন, খাস খালগুলো উন্মুক্ত রাখা এবং ড্রেনেজ-ব্যবস্থা উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এ বছরও উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে আমন ধানের বিজতলা তলিয়ে গেছে এবং কাঁচা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, অতি ভারী বৃষ্টির কারণে ডুমুরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টির ফলে সৃষ্টির জলাবদ্ধতা সরজমিনে পরিদর্শন করেছি ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বি এ ডি সি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। হতদরিদ্র দুস্থ্য অসহায় পরিবার যাদের কাচা বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা ব্যাবস্থা করছি।