
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসান সাইদু। আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ভোরে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালানোর পর এ ঘোষণা আসে। এর আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাসকাল টিগরির নেতৃত্বে একদল সৈন্য রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে হাজির হয়ে জানিয়েছিল, তারা প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে এবং সংবিধান স্থগিত করেছে।
ওই ঘটনার পর কোটোনুতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে গুলিবর্ষণের খবর দেয় দেশটিতে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস। প্রত্যক্ষদর্শীরাও গুলির শব্দ শোনার কথা জানান। এমনকি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে জিম্মি করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। পরে প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্যালন নিরাপদ আছেন এবং বর্তমানে ফরাসি দূতাবাসে অবস্থান করছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসান সাইদু বলেন, আজ ভোরের দিকে সৈন্যদের একটি ছোট দল রাষ্ট্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি বিদ্রোহ শুরু করে। তবে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ও অনুগত সদস্যরা শপথের প্রতি অটল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। তাঁদের দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই এই অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
সরকার জনগণকে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে কোটোনু শহরের আকাশে হেলিকপ্টার টহল দেখা গেছে। নগরের বিভিন্ন সড়ক সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ করে রাখে এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ভারী অস্ত্রসজ্জিত সেনা মোতায়েন করা হয়।
ফরাসি উপনিবেশ বেনিনকে পশ্চিম আফ্রিকার তুলনামূলক স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখা হয়। দেশটি আফ্রিকার অন্যতম বড় তুলা উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। তবে এটি এখনো বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর একটি।
অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর ফরাসি ও রুশ দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জনগণকে কোটোনুর প্রেসিডেন্ট কম্পাউন্ড এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
কেন অভ্যুত্থানের চেষ্টা
মিলিটারি কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন নামের বিদ্রোহী সেনারা প্রেসিডেন্ট ট্যালনের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করে অভ্যুত্থানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। এক বিবৃতিতে তারা বলে, ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার ও কাজের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেনিনের জনগণকে একটি নতুন যুগের আশা দিতে সেনাবাহিনী দৃঢ় অঙ্গীকার করছে।
প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি আগামী বছর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এপ্রিল মাসে নির্বাচনের নির্ধারিত সময় রয়েছে। তুলা ব্যবসায় ‘কিং অব কটন’ নামে পরিচিত ট্যালন ২০১৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন। তিনি তৃতীয় মেয়াদে না যাওয়ার কথা বলেছেন এবং উত্তরসূরি হিসেবে অর্থমন্ত্রী রোমুয়াল্ড ওয়াদাগনিকে সমর্থন দিচ্ছেন।
ভোটে পরাজয় টের পেয়ে গিনি বিসাউয়ের প্রেসিডেন্টই কি ঘটালেন সামরিক অভ্যুত্থানভোটে পরাজয় টের পেয়ে গিনি বিসাউয়ের প্রেসিডেন্টই কি ঘটালেন সামরিক অভ্যুত্থান
তবে তাঁর সরকার বিভিন্ন অভিযোগে সমালোচিত। গত অক্টোবর মাসে নির্বাচন কমিশন দেশটির প্রধান বিরোধী প্রার্থীকে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার অজুহাতে নির্বাচন থেকে বাদ দেয়। গত মাসে সংসদ কয়েকটি সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করেছে, যার মধ্যে দ্বিতীয় সংসদীয় কক্ষ সিনেট গঠনের বিষয়টি রয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হলেও প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদসীমা বহাল রাখা হয়েছে।
এ ঘটনার ঠিক আগে গত ২৮ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী গিনি বিসাউতে প্রেসিডেন্ট উমারু সিসোকো এমবালো ক্ষমতাচ্যুত হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বুরকিনা ফাসো, গিনি, মালি ও নাইজারে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটেছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তাসংকট বাড়িয়েছে।
এদিকে, রাশিয়া এই সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। মালি, নাইজার ও বুরকিনা ফাসো ইকোওয়াস ছেড়ে অ্যালায়েন্স অব সাহেল স্টেটস নামে নতুন জোট গঠন করেছে।
বিবিসি মনিটরিং জানিয়েছে, বেনিনের অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর রুশপন্থী কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে শেয়ার করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেনিনে জঙ্গি তৎপরতাও বেড়েছে। ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদা সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দিকে বিস্তৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে।


