খুলনায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওহেদ-উজ-জামান বুলু আত্মহত্যা করেছেন, তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে বলে নৌ পুলিশ দাবি করেছে। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, পুলিশ তা উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বুলুর রূপসা নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ভিডিওর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খুলনার সাংবাদিকেরা। তাঁরা অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে সাংবাদিক বুলুর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন কেইউজের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম।
খুলনা নৌ পুলিশ সুপার (এসপি) মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সাংবাদিক বুলু আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়।’
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশ পরিদর্শক আবুল খায়ের শেখ বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বুলু রূপসা সেতুর ৪ নম্বর বেজমেন্ট থেকে লাফ দিয়েছেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন, এটা নিশ্চিত। তবে পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, এখনো জানতে পারিনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে আবুল খায়ের শেখ বলেন, ‘বিচ্ছেদ হওয়া বুলুর দ্বিতীয় স্ত্রী তানিয়া সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। আমরা তাঁকে পাচ্ছি না। এ ছাড়া বুলু স্থানীয় সামি ক্লিনিকে ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন কি না, তা জানা যায়নি। এসব বিষয় জানতে একটু সময় লাগবে।’
এদিকে রূপসা সেতু থেকে সাংবাদিক বুলুর লাফিয়ে পড়ার দৃশ্যসংবলিত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, বুলু সেতুর যেখান থেকে লাফ দিয়েছেন, সেখান থেকে সোজা নিচে না পড়ে সেতুর অন্য স্থানে ভেতরের দিকে পড়েছেন। ফলে ভিডিওটি নিয়ে সাংবাদিকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
গার্ডনারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড
কেইউজের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। সম্প্রতি খুলনার নদ-নদীতে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা বাড়ছে। উদ্ধার হওয়া লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি কী কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, সে কারণও উদ্ঘাটন করতে পারছে না পুলিশ।
বক্তারা আরও বলেন, সাংবাদিক বুলু যদি আত্মহত্যা করেও থাকেন, তাহলে কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন? আত্মহত্যার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? কাদের চাপে তিনি আত্মহত্যা করলেন? কারা বুলুর মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, এসব বিষয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
সাংবাদিকসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ বিচার দাবি করে বক্তারা বলেন, ‘সাংবাদিক বুলু আত্মহত্যা করার মতো মানুষ নন। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। বুলুর লাশ উদ্ধার করার পর লবণচরা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত করছে নৌ পুলিশ। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, তদন্ত চলছে ধীরগতিতে। কাজেই আমরা দাবি করব, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পিআইবি, র্যাব ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা যেন ছায়া তদন্ত করে নৌ পুলিশকে সহযোগিতা করে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুলুর মৃত্যুর নেপথ্যের কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।’
কেইউজের সহসভাপতি কাজী শামিম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্রনাথ সেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব হেদায়েত হেসেন মোল্লা, সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মোস্তফা সরোয়ার, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য কৌশিক দে বাপী, সাবেক সহসভাপতি রাশিদুল ইসলাম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম কাজল, খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা, খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোস্তফা জামাল পপলু, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের কোষাধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগ গত রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খুলনার খানজাহান আলী (রহ.) রূপসা সেতুর ২ নম্বর পিলারের বেজমেন্ট থেকে খুলনার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওহেদ-উজ-জামান বুলুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি দৈনিক বঙ্গবাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ, চ্যানেল ওয়ান, ইউএনবি, দৈনিক প্রবাহ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন বুলু। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) ও বিএফইউজে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।