খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের একটি প্রদর্শনী প্লট হয়ে উঠেছে বিষমুক্ত সবজি চাষের উজ্জ্বল উদাহরণ। যেখানে রাসায়নিক নয়, ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়। ফলে কৃষকেরা দেখছেন স্বাস্থ্যকর সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। জানা যায়, সিমা রাণী সরকারের প্রদর্শনী প্লটে ২০ শতক জমিতে চাষ হয়েছে পটল। আগাছা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়েছে মালচিং পদ্ধতি। পোকামাকড় দমনে বসানো হয়েছে ফেরোমন ফাঁদ। ক্ষেতে প্রবেশের আগে বাধ্যতামূলক হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও মাস্ক পরার নিয়ম মানছেন কৃষক- শ্রমিকেরা। কৃষক সিমা রাণী সরকার বায়ো পেস্টিসাইড ব্যবহার করে নিরাপদ
সবজি উৎপাদন করেন প্রথমে ভাবিনি বিষ ছাড়া সবজি চাষ সম্ভব। কিন্তু এখন নিজের জমিতেই দেখছি কীভাবে এই পদ্ধতিতে ফসল হয়। ফলন ভালো হচ্ছে, বাজারেও দাম ভালো মিলবে আশা করছি। সিমার দেখাদেখি আশপাশের কৃষকদের মাঝেও আগ্রহ বাড়ছে। কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রদর্শনী মাঠে কাজ করতে গিয়ে নতুন অনেক কিছু শিখেছি। আগের মতো ক্ষেতে বিষ দিই না বরং পরিবেশের ক্ষতি না করে ভালো ফলন তুলতে পারছি। লাভও হবে মনে হচ্ছে। নিজের ছেলেকেও বলেছি এই চাষ
শিখতে।
ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেছে। বিষমুক্ত কৃষি শুধু একটি চাষপদ্ধতি নয়; এ যেন নতুন সচেতনতার আন্দোলন। যেখানে খাবার হয় নিরাপদ আর কৃষক হন সুস্থ ভবিষ্যতের রূপকার। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উত্তম কৃষিচর্চার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে পার্টনার প্রকল্প। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ডুমুরিয়া উপজেলায় ১০/১২ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষ করছেন। প্রদর্শনীতে যুক্ত কৃষকদের দেয়া হয়েছে উন্নতমানের বীজ, জৈব উপকরণ, মালচিং সামগ্রী, ফেরোমন ফাঁদসহ সব কৃষি উপকরণ।
নিয়মিত স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা কারিগরি পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ফসলের রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমনে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার কৃষকের ভেতর জনপ্রিয়করনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর। দেশের জনগণের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রদর্শনী করা হয়েছে। জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনের জন্য আমরা কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা উপপরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ফসলের পোকামাকড় দমনে ফেরোমেন ফাঁদ, হলুদ/ সাদা/ নীল আঠালো ফাঁদ সহ কিছু জৈব বালাইনাশক আছে যেগুলো ব্যব্যবহার করে রাসায়নিক কীটনাশকের থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, পাশাপাশি বিষমুক্ত, নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, বিষমুক্ত খাদ্যব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে কৃষক, প্রশাসন ও সচেতন সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিরাপদ খাবারের প্রতি মানুষের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এ চাহিদা মেটাতে প্রান্তিক কৃষকদের প্রয়োজন সহায়তা ও প্রশিক্ষণ। সেদিকেই আমরা এগোচ্ছি।