
খুলনায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে অস্ত্র তৈরির অভিযোগে পুলিশের অভিযানের ঘটনায় নগরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও পরে অনুসন্ধানে জানা গেছে—উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশগুলো ছিল ডামি অস্ত্রের অংশ, যা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল নগরের জোড়াগেট এলাকার একটি গলিতে অবস্থিত একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে অভিযান চালায়। অভিযানে অস্ত্র তৈরির ছাঁচ, সীসা, ট্রিগার, ট্রিগার গার্ডসহ অন্তত ৩০টি অস্ত্র তৈরির উপযোগী যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
এ সময় কারখানার মালিক মো. নজরুল ইসলামসহ আকবর আলী, শহিদুল ইসলাম ও পিকলু নামে চারজনকে আটক করা হয়। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও নথিপত্র যাচাই শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযানকালে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র ওই কারখানায় আগ্নেয়াস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছিল এবং এসব যন্ত্রাংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে—এমন তথ্যও প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। পুলিশ আরও জানায়, কারখানায় অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ তৈরি হলেও সেগুলোর সংযোজন অন্যত্র করা হতো।
খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর ইসলাম জানান, “কারখানাটিতে ট্রিগার, ট্রিগার গার্ডসহ ঢালাইয়ের মাধ্যমে অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ তৈরি হচ্ছিল। অস্ত্র তৈরির একজন কারিগরকে ঈশ্বরদী থেকে আনা হয়েছিল।”
তবে অভিযানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্ন তথ্য সামনে আসে। অনুসন্ধানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য ডামি অস্ত্র তৈরির একটি আদেশপত্র পাওয়া যায়। ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি প্লাটুনের (সেনা, নৌ ও বিমান শাখা) ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য ৫০টি কাঠের ডামি অস্ত্র তৈরি করা প্রয়োজন।
নথিতে অস্ত্র তৈরির জন্য নগরের শেরেবাংলা রোড এলাকার গাজী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ঠিকানাও উল্লেখ রয়েছে, যা অভিযানে যাওয়া কারখানার সঙ্গে মিল রয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি নৌ শাখার প্রফেসর আন্ডার অফিসার (পিইউও) এস এম তফসিরুল ইসলাম বলেন, “উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশগুলো কোনো কার্যকর আগ্নেয়াস্ত্র নয়। এগুলো সম্পূর্ণ ডামি অস্ত্র, যা শুধুমাত্র ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল।”
পরে পুলিশও বিষয়টি নিশ্চিত করে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। পরবর্তী যাচাই ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে—উদ্ধার করা যন্ত্রাংশগুলো ডামি রাইফেলের অংশ। এ কারণে আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”


