কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ, হত্যা ও লাশ গুমের দায়ে এক যুবককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. ওসমান গনি এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম মোহাম্মদ সোলেমান। তিনি টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল এলাকার ছৈয়দ করিমের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মীর মোশারফ হোসেন টিটু। তিনি বলেন, দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বিকেলে মহেশখালী উপজেলার একটি গ্রামে শিশুটি বাড়ির উঠানে খেলাধুলা করছিল। এ সময় কেক ও জুসের প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটিকে ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন সোলেমান। এতে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর সোলেমান শিশুটিকে একটি লাগেজে ভরে পেকুয়া উপজেলার বেড়িবাঁধে নিয়ে লাগেজ খুলে দেখেন, শিশুটি মারা গেছে। এরপর কাদামাটিতে লাশ পুঁতে রাখেন তিনি।
শিশুটিকে হত্যা করার পরও পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিলেন সোলেমান। এ ঘটনায় ৩ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে শিশুটির পরিবার মহেশখালী থানায় মামলা করেন। মুক্তিপণের জন্য ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১০ ডিসেম্বর বিকেলে সোলেমান ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শোয়েব উদ্দিন খানের আদালতে সোলেমান ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
পিপি মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের চার বছর আগে সোলেমান তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এ ধরনের নৃশংস ঘটনার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হতে পারে।
শিশুর বাবা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন দ্রুত রায় কার্যকর হলেই স্বস্তি পাব।’
এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে জেলহাজতে পাঠানোর সময় আসামি মোহাম্মদ সোলেমান কান্নায় ভেঙে পড়েন।