সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শনিবার , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ | চ্যানেল খুলনা

অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ

চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ দেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চীনে শুরু হওয়া করোনায় আমদানি খাতে খানিকটা আঘাত হানলেও বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়ায় এখন আঘাত আসছে রফতানি খাতেও। একইভাবে প্রবাসী আয়ও কমে যাওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইতালির মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পণ্যের সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত খাত চিহ্নিত করে আগামী তিন থেকে চার মাসের, অথবা আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অর্থনৈতিক ঝুঁকির বাজেট করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী মারা যায়নি মনে করে বসে থাকার সুযোগ নেই। বিশ্বের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, যেকোনও সময় বড় ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সরকারকে আগামী তিন থেকে চার মাসের, অথবা আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অর্থনৈতিক ঝুঁকির প্রাক্কলন বাজেট তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে কোন কোন খাতে কী ধরনের ঝুঁকি আসতে পারে, তা নির্ণয় করতে হবে। সেভাবে অর্থও বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। তবে সবার আগে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া অতীব জরুরি। এছাড়া যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বা শ্রমিক ছাঁটাই বেড়ে যেতে পারে, অথবা শ্রমিক নেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, অথবা শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে সরকারের নিজস্ব অর্থে অথবা দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করে সম্ভাব্য সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে করোনা উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক যে ১২ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করেছে, সেই ফান্ড থেকে অর্থ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত খাতের জন্যও অর্থ নেওয়া যেতে পারে।’

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঝুঁকিটা এখনও আমরা উপলব্ধি করছি না। কিন্তু যদি জনবসতিপূর্ণ বা শ্রমঘন শিল্পে করোনা ঢুকে পড়ে বা দেশের অভ্যন্তরে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাহলে অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেইনে বড় ধরনের সমস্যা হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যায়, সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ থাকার পাশাপাশি সাপ্লাই চেইন সচল রাখতে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। কারণ, আগাম প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হলে একদিকে জীবনের ঝুঁকি কমে আসবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ঝুঁকিও কমে আসবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, যেসব কারখানায় বেশি শ্রমিক কাজ করেন, সেসব কারখানার মালিক বা অ্যাসোসিয়েশনকে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে সব কারখানার প্রবেশপথেই চেক করা হয়। যাতে কোনোভাবেই অসুস্থ রোগী কোনও কারখানায় প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া কারখানার ভেতরে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, সবার শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।

গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, জনবহুল দেশ হিসেবে প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে প্রাদুর্ভাব হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। তিনি বলেন, ‘সাপ্লাই চেইন সচল রাখতে গিয়ে অর্থের সংকট মোকাবিলায় উদ্যোক্তারা যদি সহজ শর্তে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে চান, সেক্ষেত্রে তাদের সেই সুযোগ করে দিতে হবে। এছাড়া রফতানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকেও সুযোগ বাড়িয়ে দিতে হবে।’ তবে করোনার সঙ্গে পুঁজিবাজারের কোনও সম্পর্ক নেই। কাজেই করোনার কথা মাথায় রেখে পুঁজিবাজারে অর্থ দেওয়া হলে সেটা অপচয় হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে রফতানিকারকরা বলছেন, চীনের করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গার্মেন্টসহ দেশের অন্তত ১৩ থেকে ১৪টি খাতে। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি কিছু পণ্যের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বাণিজ্য সংগঠনগুলো থেকে গত মাসের শুরুতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে দেওয়া মতামতে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এমন আশঙ্কার কথা বলছিলেন শুধু চীনের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য করোনার সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ধরে নিয়ে সামনে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা মাথায় রেখে সরকারকে একটা পরিকল্পনা নিতে হবে। করোনার প্রভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে।’ খাতওয়ারি অথবা জেলাওয়ারি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘জরুরিভাবে কী কী করা যায়, তা চিন্তা করে আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে সাপ্লাই চেইন যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে কিছু সাপোর্ট দিতে পারে। উদ্যোক্তাদের এলসির ক্ষেত্র সহজ করতে পারে। ভালো উদ্যোক্তারা তারল্য সংকটে পড়লে তাদেরও সহায়তা দেওয়া উচিত হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, সামনে ঈদের বেতন-ভাতা দেওয়ার বিষয় আছে, তখন একটা সমস্যা হতে পারে। এ কারণে আগে থেকেই বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মপন্থা তৈরি করতে হবে।

জানা গেছে, করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, রফতানি বাজার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। কারণ, রফতানির বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রও বিপদে আছে। বিপদ কেউ আঁচ করতে পারছে না। তবে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত তাদের বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘এক কথায় আমরা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছি। কারণ, ইতোমধ্যে সুতা ও সেলাইয়ের সুতাসহ সব ধরনের আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম ও পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রফতানিতেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আরও বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘করোনা নিয়ে এখনও দেশের মানুষদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। এ কারণে লোকজনকে সঠিক তথ্যটা জানতে দেওয়া উচিত। প্যানিক (ভীতি ছড়ানো) চাই না বলে বসে থাকার সুযোগ নেই। প্রকৃত তথ্য জানার মধ্য দিয়ে অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে। প্রয়োজনে উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে অর্থনীতির ভয়ানক ক্ষতি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ যদি সবাই অক্রান্ত হওয়ার খবর পায়, তাহলে সামাল দেওয়াটা কঠিন হবে। শেষ মুহূর্তে বলা হলে মানুষ সতর্ক হওয়া সুযোগ পাবে না। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা জরুরি। বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা মনে করে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় রিলিফ রেডি রাখতে হবে। বিভিন্ন দেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারি ঘোষণা করেছে। এ কারণে আমাদেরও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তবে প্রথমে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরগুলোতে যারা আসছেন, তাদের সঠিকভাবে চেক করতে হবে। যেমন, ইতালি থেকে যারা করোনা নিয়ে এসেছেন, তাদের শরীরে থাকা ভাইরাস আগেই ধরা পড়া উচিত ছিল।’

জায়েদ বখত বলেন, ‘হয়তো দেশের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত আছে, কিন্তু চেক না করার কারণে জানা যাচ্ছে না। সে কারণে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। কারণ, এই রোগ আমেরিকাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’

https://channelkhulna.tv/

অর্থনীতি আরও সংবাদ

মোংলা বন্দরে ভিড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লা চালানের জাহাজ

আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

বিএইচবিএফসি’র ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত; ঋণ বিতরন ও আদায়ে খুলনা প্রথম

বিএইচবিএফসি’র ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা

মহান মে দিবসে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
উপদেষ্টা সম্পাদক: এস এম নুর হাসান জনি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: শেখ মশিউর রহমান
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
ঢাকা অফিসঃ ৬৬৪/এ, খিলগাও, ঢাকা-১২১৯।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির জন্য আবেদিত।