বগুড়ার শিবগঞ্জে রাতের আঁধারে মা-ছেলেকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার গুজিয়ার সাদুল্লাপুর বটতলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন ওই গ্রামের কুয়েত প্রবাসী ইদ্রিস আলী প্রামাণিকের স্ত্রী রানী বেগম (৪০) ও তার কলেজপড়ুয়া ছেলে ইমরান প্রামাণিক (১৬)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইদ্রিস আলী ৮ বছর ধরে কুয়েত থাকেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ইলা প্রামাণিক বগুড়ার একটি মেসে থেকে সরকারি মুজিবর রহমান মহিলা কলেজে পড়াশোনা করেন। ছেলে ইমরান শহরের ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সোমবার রাতে ইমরানদের বাড়িতে তার প্রতিবেশী বন্ধু মেহেদী হাসান রাত্রিযাপন করেন। ইমরান ও মেহেদী হাসান এক ঘরে এবং তার মা অন্য ঘরে শুয়ে পড়েন।
তাদের বাড়ি মেরামতের কাজ চলছিল। সকাল ৮টার দিকে রাজমিস্ত্রিরা এসে বাড়ির গেট বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেন।
প্রতিবেশীরা বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গেট ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর ঘরের বারান্দায় রানী বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। ঘরের ভেতরে তার ছেলে ইমরানেরও রক্তমাখা দেহ দেখা যায়। দুজনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুন করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
প্রতিবেশীরা জানান, ইদ্রিসের বড় মেয়ে ইলার ঘরোয়াভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল বুধবার। ছেলের বাড়ি দুপচাঁচিয়ায়। এজন্য বেশকিছু স্বর্ণালংকার কিনে বাড়িতে রাখেন তার মা। তাদের খুন করার পর দুর্বৃত্তরা বেশকিছু নগদ টাকা ও প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। ইমরানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও নেই। রাতে মেহেদী হাসান নামে যে প্রতিবেশী তাদের বাড়িতে ছিল তারও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রতিবেশী ইমরানের চাচা ফেরদৌস প্রামাণিক বলেন, ইদ্রিস আলী জমি বিক্রি করে কুয়েত গেছেন। তার স্ত্রী ২ সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বড় মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল বুধবার। তার আগেই ইদ্রিসের স্ত্রী ও ছেলেকে নৃশংসভাবে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। কী কারণে কারা খুন করল তা বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে মা ও ভাইয়ের হত্যার খবর পেয়ে ইলা বাড়িতে ছুটে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার মা ভাই কী অপরাধ করেছে যার কারণে তাদের নির্মমভাবে খুন করল। খুন না করে টাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে গেলেই পারতো। আমি এখন কার কাছে থাকব।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের স্বামী ইদ্রিস আলীকে খবর দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
এদিকে পিবিআইকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহের সুরতহাল শেষ করে তা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মো. রায়হান বলেন, হত্যার রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থলে আমরা কাজ করছি। যে ছেলে রাতে তাদের বাড়িতে ছিল তার সন্ধান করা হচ্ছে। তাকে পাওয়া গেলে খুনের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।