খুলনার ডুমুরিয়ার রংপুর গ্রামের আধপাকা টিনের ছোট একটি মন্দির। মন্দিরের বাইরে জড়ো হয়েছেন প্রতিবেশীরা। ভিতর থেকে ভেসে আসে হাহাকার-কখনও শিশুকণ্ঠের চিৎকার, কখনও মায়ের আকুল আর্তনাদ। মন্দিরের মেঝেতে শুয়ে আছে রংপুর কালিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জেনিসা বাড়ই।
বয়সে ছোট হলেও প্রতিদিন তার লড়াই অমানুষিক যন্ত্রণার সঙ্গে। সিউডোসিজার নামের বিরল রোগে আক্রান্ত জেনিসা প্রতিদিন ৫০-৬০ বার খিঁচুনির কবলে পড়ে। হঠাৎ হাত-পা কাঁপতে শুরু করে,শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যায়। কখনও গড়াগড়ি খায়,আবার কখনও মেঝেতে বা দেয়ালে মাথা ঠুকতে থাকে।কয়েক মিনিটের এই আক্রমণ শেষে ছোট্ট শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে।গত দেড় মাস ধরে এমন অমানুষিক যন্ত্রণাই তার নিয়তি।
নিজেদের বাড়ির অপর্যাপ্ত জায়গা এবং আক্রান্ত হওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে জেনিসাকে মামাদের বাড়ির কোলঘেষা মন্দিরে রাখা হয়েছে। এতে সিউডোসিজারের আক্রমণ হলে তাকে নিরাপদে রাখা যায়।
চিকিৎসার জন্য জেনিসার বাবা,ভূমিহীন কৃষক শুকদেব দাস,খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার বড় বড় হাসপাতালে ছুটেছেন।সর্বস্ব ব্যয় করেও ফল মেলেনি। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন ভারতে নিয়ে যাওয়ার,কিন্তু সেখানে বড় বাধা-ভিসা জটিলতা ও অর্থসংকট।শুকদেব দাসের কথায়-“মেয়ের চিকিৎসায় যা ছিল সব শেষ করেছি। দরকার হলে না খেয়ে থাকব তবুও মেয়ের চিকিৎসা করাব।”
মা ঝুমা বিশ্বাস একমাত্র মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না।চোখ ভিজে আসে তার প্রতিটি কথায়-“ওর কান্না আর যন্ত্রণার দৃশ্য আমি আর দেখতে পারি না।আমার শুধু একটাই আর্তি-মেয়ে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।”
মন্দিরের মেঝেতে রাখা জেনিসাকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমে।আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা তাকে দেখতে আসেন,সমবেদনা জানান।কেউ ছোটখাটো সহায়তা করে,কেউ আবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা বলেন।গ্রামের লোকজনের ভাষায়,তাদের চোখের সামনে একটি চঞ্চল মেয়ে অমানুষিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়েছে। সবাই চাইছে, জেনিসা দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক এবং তার এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাক।
জেনিসার সহপাঠী ও বান্ধবীরাও তাকে ভীষণ মিস করছে। তারা বলছে-“আমরা চাই, ও দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার ক্লাসে ফিরুক এবং খেলাধুলায় অংশ নিক। “
স্কুল শিক্ষক হীরম্ময় সরকার জানান- “জেনিসা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী।দেড় মাসের বেশি সময় স্কুলে আসতে পারছে না।আমরা চাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসুক,যাতে দ্রুত ভিসা হয় এবং তার চিকিৎসা নিশ্চিত হয়।”
শারীরিক যন্ত্রণার মাঝেও জেনিসার স্বপ্ন অটুট। সে চায় একদিন ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন-ভিসা জটিলতার দ্রুত সমাধান এবং আর্থিক সহায়তা,যাতে জেনিসা তার চিকিৎসা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এবং তার স্বপ্নের পথে এগোতে পারে।