
দেশের ফৌজদারি আইনে ফেমিসাইড বা লিঙ্গগত কারণে নারী হত্যাকে পৃথক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আজীবন কারাদণ্ডের বিধান পাস করেছে ইতালির পার্লামেন্ট। গত মঙ্গলবার নিম্নকক্ষে ভোটের মাধ্যমে এই আইনটি অনুমোদিত হয়।
সিএনএন জানিয়েছে, নতুন আইনটি প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল সরকারের সমর্থন পেয়েছে। মধ্য-ডানপন্থী জোট এবং মধ্য-বামপন্থী বিরোধী দল উভয়ই আইনটির পক্ষে ভোট দেয়। মোট ২৩৭ ভোটে এটি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে গৃহীত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইতালিতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় আইনটি প্রণীত হয়েছে। এতে স্টকিং, প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য লিঙ্গভিত্তিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জুলিয়া সেচেত্তিনের নির্মম হত্যাকাণ্ড ইতালিতে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এই ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড ইতালির সমাজে পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং নারীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
আইন পাসের পর প্রধানমন্ত্রী মেলোনি বলেন, ‘আমরা সহিংসতা–বিরোধী কেন্দ্র ও আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণ করেছি, জরুরি সহায়তা হটলাইন চালু করেছি এবং নতুন শিক্ষামূলক কর্মসূচি নিয়েছি। এগুলোর অগ্রগতি হলেও আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।’
তবে বিরোধী দল আইনটিকে সমর্থন করলেও তারা দাবি করছে, সরকার শুধু অপরাধ দমনেই জোর দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটির মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য, যা অনুচ্চারিতই রয়ে গেছে।
ইতালির পরিসংখ্যান সংস্থা ইস্তাত জানিয়েছে, ২০২৪ সালে দেশটিতে ১০৬টি নারীহত্যা রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ টির পেছনে দায়ী ছিলেন বর্তমান বা সাবেক সঙ্গী।
এদিকে স্কুলে যৌন ও আবেগ বিষয়ক শিক্ষা চালুর বিষয়েও দেশটিতে বিতর্ক চলছে। সরকারের প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব শিক্ষা নিষিদ্ধ থাকবে এবং উচ্চমাধ্যমিকে এমন ক্লাস নিতে অভিভাবকের স্পষ্ট সম্মতি লাগবে। সরকার বলছে, এটি শিশুদের আদর্শগত প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু বিরোধীরা একে ‘মধ্যযুগীয়’ নীতি বলে সমালোচনা করেছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান এলি শ্লেইন বলেছেন, ‘ইউরোপের মাত্র সাতটি দেশে যৌন ও সম্পর্ক–শিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়; ইতালি তার একটি। অপরাধ দমন করলেই শুধু হবে না—প্রতিরোধ শুরু হতে হবে স্কুল থেকেই।’


