ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন মোহন রঙ্গনাথনের মতে, গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত মানবিক কর্মকাণ্ডের ফলাফল হতে পারে। এই প্রথমবারের মতো পাইলট স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন—এমন সম্ভাবনা উঠে এল। রঙ্গনাথন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ক্যাপ্টেন রঙ্গনাথন দাবি করেছেন, ফুয়েল কাট-অফ সুইচ চালু করার পদ্ধতি ও ককপিট অডিও বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যায়, দুর্ঘটনাটি ককপিটেই ইচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া পদক্ষেপের ফল, এমনকি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেও হতে পারে। এনডিটিভি তাঁর কাছে জানতে চায়, ‘একজন পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবে ইঞ্জিনের ফুয়েল বন্ধ করেছিলেন, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে—আপনি কি এটা বলছেন?’ উত্তরে রঙ্গনাথন বলেন, ‘ঠিক তাই-ই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা (ফুয়েল বন্ধ করা) অবশ্যই হাতে করে করতে হয়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিংবা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এই ফুয়েল সিলেক্টরগুলো স্লাইডিং টাইপ না। সেগুলো নির্দিষ্ট স্লটে স্থির থাকে এবং সেগুলো ওপরে বা নিচে নাড়াতে হলে টেনে বের করতে হয়। তাই হঠাৎ করে ভুলবশত বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটা স্পষ্টতই হাতে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করা হয়েছে।’
এদিকে, গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। এতে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাঝ আকাশে প্লেনটির দুই ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায় কোনো।
আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হয় ২ ইঞ্জিনআহমেদাবাদে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হয় ২ ইঞ্জিন বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন বিমানে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘ফুয়েল কাট-অফ সুইচ’—যেগুলো সাধারণত ‘রান’ অবস্থায় থাকে—তা একের পর এক ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়। দুইটি সুইচই এক সেকেন্ডের ব্যবধানে বন্ধ হয়, ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এই ঘটনাটিকে তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই পাইলটেরা ককপিটে যেসব কথা বলেছিলেন সেগুলোর ভয়েস রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে, একজন পাইলট বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি বন্ধ করে দিলে?’ অন্য পাইলট জবাব দেন, ‘আমি দিইনি।’
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্লেনের ‘র্যাম এয়ার টারবাইন—আরএটি’ উড্ডয়নের কিছু পরেই খুলে যায়। এটি তখনই খুলে পড়ে যখন বিমানের সব বিদ্যুৎ ও থ্রাস্ট সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। আরএটি একটি ছোট বায়ু টারবাইন যা উড়োজাহাজে সাধারণত জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় ব্যবহৃত হয়। মূলত উড়োজাহাজের মূল পাওয়ার সিস্টেম ব্যর্থ হলে ফ্লাইট কন্ট্রোল, নেভিগেশন এবং কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সচল রাখার জন্য এটি বিদ্যুৎ এবং হাইড্রোলিক প্রেশার সরবরাহ করে।
মেডিকেল হোস্টেলের ছাদে পাওয়া গেল বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ‘ব্ল্যাক বক্স’মেডিকেল হোস্টেলের ছাদে পাওয়া গেল বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ‘ব্ল্যাক বক্স’ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, উড্ডয়নের পরপরই আরএটি খুলে যায়। উড্ডয়ন পথে তেমন পাখি দেখা যায়নি। উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরের সীমানা দেয়াল পার হওয়ার আগেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে অর্থাৎ ক্রমেই নিচের দিকে নামতে থাকে।’
উড়োজাহাজের ‘ব্ল্যাক বক্স’ হিসেবে পরিচিত এনহ্যান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডারের (ইএএফআর) ডেটায় দেখা গেছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া ফুয়েল সুইচ দুটি আবার ‘রান’ অবস্থায় ফেরত আনা হয়। এর পর, ইঞ্জিন-১ কিছুটা শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারলেও ইঞ্জিন-২ তা পারেনি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইঞ্জিন-১ এর কোরের গতি কমে যাওয়া থেমে যায় এবং কিছুটা গতি ফিরে পায়। কিন্তু ইঞ্জিন-২ আবার জ্বলে উঠলেও কোর গতি কমে যাওয়াকে থামাতে পারেনি এবং পুনঃপুন জ্বালানি প্রবাহ দিয়ে গতি ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও তা কাজে দেয়নি।’