
‘২০০১ সালের ৫ মে সেনাবাহিনীর কর্পোরাল পদে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভিংয়ে চাকরি করতে থাকি। পেনশনের টাকা আর চাকরির বেতন দিয়ে স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে মোটামুটি ভাবে সংসার চলতেছিল। এর মাঝে দুই মেয়ের বিয়ে হয়। সম্প্রতি ছেলেও বিয়ে করেছে। সেনাবাহিনীর ১৮ বছরের চাকুরী জীবনে কখনও শরীরে বড় ধরনের কোন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। অবসর গ্রহণের পরও সুস্থ শরীরে ছিলাম।
কিন্তু মাস তিনেক আগে হঠাৎ মাজার দু’পাশে ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করি। বমি হতে শুরু করে। মাথা ঘুরানোসহ শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিডনির সমস্যাজনিত কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দু’টো কিডনিতে সংক্রামক ধরা পড়ে। এরপর ৬ জন চিকিৎসক বোর্ড বসিয়ে পরামর্শ করে ঢাকা কিডনি ফাউন্ডেশনে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিডনি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বলেন আপনি বাড়ি চলে যান, আপনার চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। আপনার দু’টো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। কিডনি প্রতি স্থাপন করলে সেক্ষেত্রে আপনি সুস্থ হতে পারবেন। সেটা না হলে ডায়ালাইসিস করে যে কয়দিন বাঁচতে পারেন। তারা বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ হবে ১৩ লাখ টাকা। এ কথা শুনে বাড়ি চলে আসি। ১৩ লাখ টাকা আমার পক্ষে জোগাড় করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমার যে ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি আছে, সেটা বিক্রি করেও ১৩ লাখ টাকা হবে না।
বর্তমানে নিজ ঘরে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। কারও সহযোগিতা ছাড়া হাঁটতে চলতে পারি না। পেনশনের আট হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। ছেলে আব্দুল্লাহ আল ইয়াসিন রিফাত ঢাকার হেমায়েতপুর সামান্য বেতনে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে। তার পক্ষেও আমার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। যশোর সামরিক হাসপাতালে যেয়ে সপ্তাহে দুই দিন ফ্রী ডায়ালাইসিস করে আসি। ওষুধপত্রও সেখান থেকে ফ্রি পাই। ১৩ লাখ টাকা আমার কাছে অনেক কিছু কিন্তু অনেকের কাছে এটা কিছুই না। ১৩ লাখ টাকার কারণে আমার জীবন প্রদীপ নিভে যাবে! সমাজের অনেক বিত্তবান ব্যক্তি আছে যারা ইচ্ছা করলে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে আমার একটা কিডনি প্রতিস্থাপন করে দিতে পারেন। আমি বাঁচতে চাই, আপনারা আমাকে বাঁচান। কান্নাজনিত কন্ঠে এভাবেই নিজের বাঁচার আকুতি জানান ৬০ বছর বয়সী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্পোরাল মোঃ হায়দার আলী ফরাজী।
তিনি, বলেন, ১৯৮৩ সালে স্টার জটমিল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালীন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকুরিতে যোগদান করি। দীর্ঘ ১৮ বছর চাকুরী করার পর ২০০১ সালের ৫ মে অবসর গ্রহণ করি।
হায়দার আলীর বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী ইউনিয়নের হাজীগ্রামে।
সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা হিসাব নং 2712002100869 সোনালী ব্যাংক, কেডিএ নিউ মার্কেট শাখা, খুলনা। মোবাইল নং 01712938369।


