
খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. মোতালেব শিকদারকে গুলির ঘটনায় নারী সঙ্গী মোসা. তনিমা তন্বীসহ অজ্ঞাত আরও ৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে আহত মোতালেব শিকদারের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা বাদী হয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় এ মামলা করেন। এ মামলায় খুলনা জেলা জাতীয় যুব শক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব তনিমা তন্বীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গুলির ঘটনায় তন্বীসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পর তন্বীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি আরও জানান, শারীরিক অসুস্থতার কথা জানালে মঙ্গলবার বিকেলে তন্বীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গুলির ঘটনার পর থেকেই পুলিশ মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে ওই বাসার বরাদ্দপ্রাপ্ত তন্বীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ঘটনার আগের রাতে ওই বাসায় তিনজন অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দিন ভোরে ৭/৮ জন সন্ত্রাসী সেখানে প্রবেশ করে মোতালেব শিকদারকে জিম্মি করে। তারা তাকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে টাকা দাবি করে।
বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা মোতালেবের কাছে ১০ হাজার পিস ইয়াবা থাকার কথা বলে ভয়ভীতি দেখায় এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করতে গুলি ছোড়ে। গুলির পর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আরিফ নামে এক ব্যক্তি আহত মোতালেবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ডিসি তাজুল ইসলাম আরও বলেন, যারা গুলি করেছে এবং যারা টাকা দাবি করেছে তাদের শনাক্তে কাজ চলছে। খুব দ্রুতই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে খুলনা মহানগরের সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মসজিদ স্মরণীর ১০৯ নম্বর সড়কের মুক্তা হাউজের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। ফ্ল্যাটটি তন্বী নামের এক তরুণীর ভাড়া নেওয়া বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণীর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে তন্বীকে আটক করে। পুলিশ ওই কক্ষ থেকে একটি গুলির খোসা, ৫টি মদের বোতল, ইয়াবা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, তন্বীর সঙ্গে মোতালেবের আগে থেকেই যোগাযোগ ছিলো। গত ৩ মাসে ২৭৩ বার তাদের কথা হয়েছে। আরও জানা যায়, মোতালেব শিকদার পূর্বে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তিতে যোগ দেন। এর আগে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের সঙ্গে মোতালেব শিকদারের বেশ সখ্যতা ছিলো। তার প্রভাবেই তিনি মূলত শ্রমিক লীগের রাজনীতি করতেন এবং প্রভাব বিস্তার করে বেড়াতেন বলে স্থানীয়রা জানান। আরও জানা যায়, মোতালেব শিকদার খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ২০২২ সালে ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্যানেল থেকে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ সময় তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে যোগ দেন এবং দলটির শ্রমিক সংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’-তে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্ব পান।
এনসিপির নেতাকর্মী ও খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিক নেতা জানান, গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদার মূলত পেশায় একজন ট্রাক চালক। খুলনা নগরীর পল্লীমঙ্গল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় তার পারিবারিক বাড়ি। তার বাবা মুসলিম শিকদারও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত।


