প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন, সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায়, যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কি না, সেটা চেষ্টা করে দেখবে—তাদের দেশে এটা সম্ভব কি না। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
জাতীয় ঐকমত্যের বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর মনে আশা ছিল যে, হয়তো দু-একটা বিষয়ে দলগুলোকে একমত করতে পারব। রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, কেউ কারও কথা শুনবে না। কাজেই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। উনি একজন গুণীজন। উনি বুঝে বুঝে যদি অগ্রসর হতে পারেন! অবাক কাণ্ড! সারা দেশ দেখল, সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু আলাপে বসল না, চমৎকার আলাপ করল। এত গভীরভাবে, এত গভীর জ্ঞানের সঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হলো, এত সৌহার্দ্যের সঙ্গে আলোচনা হলো—এটা না দেখলে আমাদের বিশ্বাস হতো না।’
রাজনৈতিক নেতাদের ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যাঁরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছেন, বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তাঁরা প্রত্যেকে দেখেছেন; কারণ, টেলিভিশনে এটা প্রচার হচ্ছিল ক্রমাগতভাবে। কীভাবে তাঁরা তাঁদের যাঁর যাঁর নীতিগুলো তুলে ধরছেন, বক্তব্যগুলো তুলে ধরছেন—সেটা সব মানুষ শুনতে পেয়েছে। শুনতে পেয়েছে শুধু নয়, তারা অংশগ্রহণ করেছে। মনে মনে অংশগ্রহণ করেছে। ঘরের মধ্যে তর্কবিতর্ক করেছে—কার কথা ঠিক, কার কথা উচিত, কোনটা মানলে ভালো হবে, কোনটা গ্রহণ করা উচিত হবে এবং সেটা নিজেদের মধ্যে লেখালেখি করেছে, তর্কবিতর্ক করেছে। সারা জাতিকে এটার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে। আপনারা শুধু সীমাবদ্ধ কামরাতে বসে আলাপ করেননি, আপনারা সারা জাতিকে এটার মধ্যে, আলোচনার মধ্যে শরিক করেছেন।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘কেউ তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়ে গেছে—এমন ছিল না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, বেশি দূর বোধ হয় অগ্রসর হবে না। কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়ে বোধ হয় সমাপ্ত হবে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে যত জটিল বিষয় হোক না কেন, ঐকমত্যে এসেছে। আজকে আমরা একটা দীর্ঘ তালিকা নিয়ে এই সনদ প্রণয়ন করতে পারছি। আমরা রাজনৈতিক দলের সদস্যদের জন্য এবং আমাদের ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যবৃন্দের জন্য জোরে একটা হাততালি দিই—অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে যে, তারা কীভাবে এটা করেছিল।’