যশোর শহরে এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে টানাটানি ও হাতাহাতিতে জড়ানো সেই দুই পুরুষ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ও দুপুরে তাঁরা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এদিকে ওই নারীর ছেলে, ছেলের বউসহ স্বজনেরা দ্বিতীয় স্বামী দাবি করা ব্যক্তিকে শায়েস্তা করতে কারাফটকে অবস্থান নিলে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে কারারক্ষী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে যশোর শহরের চার খাম্বার মোড়ে এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে ফরিদপুর সদরের একই গ্রামের দুই বাসিন্দা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে হেফাজতে নেয়। এরপর কোতোয়ালি থানা-পুলিশ দুই পুরুষকে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। আজ বৃহস্পতিবার দুজন কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এর আগে গতকাল বুধবার দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু কুমার মণ্ডল। ওই জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছালে আজ সকালে একজন ও দুপুরে অপরজনের মুক্তি দেওয়া হয়।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, দুজনই আজ কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন—এমন খবর পেয়ে ওই নারীর ৩৫ বছর বয়সী ছেলে ও ছেলের বউ আগে থেকে কারাগারের ফটকে অবস্থান নেন। দ্বিতীয় স্বামী দাবি করা ব্যক্তিকে তাঁরা মারধর করতে উদ্যত ছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামী দাবি করা ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁরা কারারক্ষীদের ওপর চাপ দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তেজনাকর দেখে কারা কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানার পুলিশকে ডাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পরে দুপুরের দিকে দ্বিতীয় স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কারাফটকে এক তরুণ বলছেন, ‘আমার মা ওই ব্যক্তির জিম্মায় রয়েছেন। আমরা মাকে ফেরত চাই।’ আর ছেলের বউ বলছেন, তাঁর (শাশুড়ি) নামে কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তিনি যেখানেই যান, ওই সম্পত্তি যেন তাঁদের নামে দিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ শরিফুল আলম বলেন, ‘১৫১ ধারার মামলায় জামিনে আজ দুই ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছেন। একজনের সন্তানেরা সকাল থেকে কারাফটকে অবস্থান নেন অপরজনকে মারধর করার জন্য। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কারারক্ষীদের ওপরে চাপ সৃষ্টি করেন। সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ ডাকা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাফটকে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পরে স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ ও ঘটনায় জড়িত তিনজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পুরুষের মধ্যে একজনের (৫৩) সঙ্গে প্রায় ৩৬ বছর সংসার করেছেন ওই নারী। ওই সংসারে তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই সংসার ছেড়ে আরেক পুরুষের (৪৮) সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ওই নারী। পরে সেই পুরুষের সঙ্গে তিনি ভারতে চলে যান এবং সেখানে তাঁরা বিয়ে করেন। এরপর গত সোমবার রাতে তাঁরা যশোরে ফিরে একটি হোটেলে ওঠেন। খবর পেয়ে প্রথম স্বামী সেই হোটেলে যান। এরপরই সেখানে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।