ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বাসভবনে আজ বৃহস্পতিবার পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাজ্যে তাঁর এই দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরের মূল লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের দিন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে চড়েছিলেন ট্রাম্প। যোগ দিয়েছিলেন রাজকীয় ভোজসভায়। আজ যুক্তরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২০৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ প্যাকেজ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ও স্টারমার আলোচনা শুরু করেন।
প্রযুক্তি, জ্বালানি এবং জীবন-বিজ্ঞান সম্পর্কিত এই চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যে তথাকথিত ‘বিশেষ সম্পর্ক’ নবায়নের ইঙ্গিত দেয়। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে স্টারমার কঠোর পরিশ্রম করে আসছেন।
স্টারমার মূলত দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিগুলো সামনে আনতে চান। এর মধ্যে রয়েছে একটি নতুন প্রযুক্তি চুক্তি; যেখানে মাইক্রোসফট থেকে শুরু করে এনভিডিয়া, গুগল ও ওপেনএআই—এসব কোম্পানি আগামী কয়েক বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি খাতে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এক কর্মকর্তার মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, স্টারমার ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরও কমানোর আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তিনি বলতে পারবেন, ব্রিটেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে; যা তার আর্থিক পরিষেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতের সঙ্গে যুক্ত।
স্টারমার আলোচনার মোড় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকেও ঘোরাতে চাইবেন। তিনি আশা করছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তিনি মার্কিন নেতাকে রাজি করাতে পারবেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘আগ্রাসী’ বলে ইউরোপকে খুশি করেছিলেন। তবে মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে তিনি দাবি করছেন, ইউরোপকে অবশ্যই রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের বিষয়ে স্টারমার গাজায় হামলার বিষয়টি ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরার জন্য চাপের মুখে আছেন।
ট্রাম্প যদিও কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলায় হতাশা প্রকাশ করেছেন, তবে তিনি সামগ্রিকভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন।
ট্রাম্প ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘হামাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে সমালোচনা করেছেন। যদিও তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, স্টারমার যদি ‘একটি অবস্থান নিতে’ চান, তবে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইভি অ্যাস্পিনাল বলেন, ‘এই দুটি ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রই তাঁদের কথোপকথনে বিরোধের কারণ হতে পারে। দুই নেতার আলোচনায় কিছু অস্বস্তিকর মুহূর্ত থাকবে।’