ছয় দিন পর লাইফ সাপোর্ট খোলা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের। তিনি হাত-পা নাড়াচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারছেন। এদিকে আহত আরেক শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল। তার মাথার খুলির একাংশ এখনও ফ্রিজে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার বেলা ১১টায় সায়েমের বিষয়ে দ্বিতীয়বার মেডিকেল বোর্ড বসে। এতে ছিলেন নিউরোসার্জন কামাল উদ্দিন, মো. ইসমাইল, মো. মনজুরুল ইসলাম ও নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাসানুজ্জামান। বোর্ডের সিদ্ধান্তেই পরীক্ষামূলকভাবে সায়েমের লাইফ সাপোর্ট খোলা হয়েছে। এর আগে আজ দু’জন মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে হাসপাতালে আনার সিদ্ধান্ত হয়। গত বুধবারও সায়েমের জন্য মেডিকেল বোর্ড বসেছিল।
গত ছয় দিন ধরে হাসপাতালে নিথর হয়ে পড়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সায়েম। গত রোববার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে তিনি গুরুতর আহত হন। মাথায় রামদার কোপ লেগেছে তার মাথার খুলিতে।
সায়েমের কনশাস লেভেল (চেতনার মান) এতদিন ছিল ৬–এর আশপাশে। একজন স্বাভাবিক মানুষের কনশাস লেভেল থাকে ১৫। এটি ১০–এর ওপরে ওঠার আগপর্যন্ত তাকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এখন সায়েমের এটি ১০ এর কাছাকাছি আছে।
সায়েমের ভাই আসাদুজ্জামান সজীব বলেন, তার স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা আইসিইউর ভেতরে যাইনি। বাইরে থেকেই খোঁজখবর নিচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে । তারা আশা দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা তো আশার আলো দেখি না।
সায়েমের বাড়ি কুমিল্লায়। তবে তার পরিবার থাকে বগুড়ায়। ছেলে আহত হওয়ার খবর পেয়ে সেখান থেকে গত সোমবার সকালে তার বাবা আমির হোসেন ও মা শাহনাজ আমিন চট্টগ্রামে আসেন। ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরবেন, সেই অপেক্ষায় আইসিইউর সামনে তাদের দিন কাটছে।
সায়েমের বাবা মোহাম্মদ আমির হোসেন বললেন, ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়েছি বিধাতার কাছে। আশা করছি আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না।
পার্কভিউ হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, সায়েমের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তিনি হাত-পা নাড়াচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারছেন। লাইফ সাপোর্ট খোলার পর তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।
গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মামুন মিয়াও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি। রামদার কোপে তার মাথায় হয়েছে গুরুতর ক্ষত। এটি এতটা গভীরে গেছে যে খুলির একাংশ খুলে ফেলতে হয়েছে। ওই অংশ ফ্রিজে রেখে তার মাথা মোড়ানো হয়েছে সাদা ব্যান্ডেজে। কালো কালিতে সেখানে লেখা ‘হাড় নেই চাপ দেবেন না।’
মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা বললেন, মামুন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে। তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা শঙ্কিত আছি। ডাক্তার বলেছেন, সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে তার। সুস্থ হলেও মেনে চলতে হবে অনেক বিধিনিষেধ।
পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ ডা. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, সায়েমের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। তবে তার জ্ঞান ফিরেছে। ব্লাড প্রেশারেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
মামুনের বিষয়ে তিনি বলেন, তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খুলি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। যদি সুস্থ থাকে, দুই থেকে আড়াই মাস পর তা পুনঃস্থাপন করা হবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে তার।
গত ৩০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ঘটনা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। একজন ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তার গায়ে হাত তোলেন। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং তা গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন প্রায় ৪০০ জন।