সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা সোমবার , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ৫৫ বছরে বিশ্বে প্রাণ গেছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের: গবেষণা | চ্যানেল খুলনা

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ৫৫ বছরে বিশ্বে প্রাণ গেছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের: গবেষণা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কোনো বৈরী দেশকে শায়েস্তা করার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে পশ্চিমারা প্রায়ই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। সেই কৌশল কতটা কার্যকর, তা তর্কসাপেক্ষ হলেও এতে যে কোটি কোটি মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সম্প্রতিক এক গবেষণায় পশ্চিমাদের এই ‘মোক্ষম হাতিয়ারে’ বেঘোরে প্রাণ হারানো তৃতীয় বিশ্বের মানুষের একটি পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় ১৯৭০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সম্পর্কিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। ফলাফল ভয়াবহ! গবেষকদের মূল অনুমান অনুযায়ী, ১৯৭০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কেবল ১৯৯০-এর দশকের কিছু বছরে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালেই নিষেধাজ্ঞার কারণে মৃত্যু হয়েছে ৮ লাখেরও বেশি মানুষের।

এই গবেষণার ফলাফল বলছে, প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি নিহত মানুষের কয়েক গুণ। যেখানে গড়ে প্রতিবছর যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয়, সেখানে নিষেধাজ্ঞায় মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক লাখ। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভুক্তভোগী শিশু ও প্রবীণ; যারা অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল ২০১২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে ১০ লাখেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গবেষণা বলছে, ক্ষুধা ও বঞ্চনা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অনিচ্ছাকৃত ফল নয়; বরং এগুলোই হলো মূল লক্ষ্য। এর প্রমাণ মেলে ১৯৬০ সালের এপ্রিলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি গোপন নথিতে। সেখানে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ও বিপ্লবকে ঘিরে জনগণের ব্যাপক সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, ‘কিউবার অর্থনৈতিক জীবনকে দুর্বল করতে যা সম্ভব সবকিছুই দ্রুত গ্রহণ করা উচিত।’ নথিতে আরও বলা হয়েছিল, কিউবাতে অর্থ ও পণ্য প্রবাহ বন্ধ করতে হবে, যাতে আয় ও প্রকৃত মজুরি কমে যায়, ক্ষুধা ও হতাশা তৈরি হয় এবং শেষ পর্যন্ত সরকার পতন ঘটে।

জরিপ অনুযায়ী, ১৯৭০-এর দশকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫টি দেশ পশ্চিমা একতরফা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩০টি দেশ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। আর বর্তমানে, ২০২০-এর দশকে, এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-এরও বেশি।

এখন পর্যন্ত গবেষকেরা সাধারণত একেকটি দেশের প্রেক্ষাপটে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞার মানবিক প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ এবং এতে সামগ্রিক চিত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, গবেষণায় একটা জিনিস স্পষ্ট যে নিষেধাজ্ঞার মানবিক খেসারত প্রায়ই ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গবেষকেরা প্রমাণ করেছেন, ১৯৯০-এর দশকে ইরাকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশটিতে ব্যাপক অপুষ্টি, পানীয় জলের সংকট, ওষুধ ও বিদ্যুতের সংকট তৈরি করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যুদ্ধ দেশটিকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে অতিরিক্ত ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও এই নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে আল-জাজিরায় যৌথভাবে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক জেসন হিকেল, ম্যাকুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সের ফেলো ডিলান সুলিভান এবং ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক ওমর তাইয়্যেব।

তাঁরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বহুদিন ধরেই একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এর মাধ্যমে তারা গ্লোবাল সাউথের এমন সব সরকারকে শাস্তি দিতে বা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে, যারা পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীন পথ খুঁজতে চেয়েছে এবং প্রকৃত অর্থে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণ বলতে সাধারণত সেই দেশগুলোকে বোঝানো হয়, যেগুলো তুলনামূলকভাবে কম উন্নত বা উন্নয়নশীল এবং প্রধানত এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।

হিকেল, ডিলান ও ওমরের মতে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নির্ভর করে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা (মার্কিন ডলার ও ইউরো), আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম (যেমন—সুইফট) এবং অপরিহার্য প্রযুক্তির একচেটিয়া দখলের ওপর (যেমন—স্যাটেলাইট, ক্লাউড কম্পিউটিং, সফটওয়্যার)।

বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো যদি আরও স্বাধীন পথে হাঁটতে চায়, তবে তাদের নিজেদের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে (যেমন—নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন, বিকল্প স্যাটেলাইট বা পেমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা, দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য জোরদার করা)। এতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ‘প্রতিক্রিয়া’ বা পাল্টা আঘাত থেকে তারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে। রাশিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, এমন একটি পথ বেছে নেওয়া সম্ভব এবং কার্যকরও হতে পারে।

তাঁরা আরও বলছেন, এই দেশগুলো পশ্চিমা বলয় থেকে বেরিয়ে বেশি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য ও মুদ্রা বিনিময়ের বিকল্প পথ গড়ে তুলে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরি করে এবং পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নতুন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে।

এরই মধ্যে বেশ কিছু দেশ এই পথে এগোচ্ছে। বিশেষ করে চীনে যে নতুন সিস্টেমগুলো তৈরি হয়েছে (যেমন—আন্তর্জাতিক পেমেন্টের জন্য সিআইপিএস, স্যাটেলাইটের জন্য বাইদু, টেলিকমের জন্য হুয়াওয়ে), সেগুলো এখন বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর জন্য বিকল্প হয়ে উঠছে। এগুলো পশ্চিমা-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা এবং নিষেধাজ্ঞার ফাঁদ এড়িয়ে চলার একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিচ্ছে।

মন্তব্য প্রতিবেদনের তিন লেখক মত দিয়েছেন, সার্বভৌম উন্নয়ন অর্জন করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর জন্য এই পদক্ষেপগুলো শুধু জরুরিই নয়, বরং নৈতিক দায়িত্বও বটে। তাঁরা বলেন, ‘আমরা এমন একটি বিশ্ব মেনে নিতে পারি না, যেখানে পশ্চিমা আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিবছর অর্ধমিলিয়ন মানুষের প্রাণ যায়। সহিংসতার ওপর দাঁড়ানো এ ধরনের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে হবে এবং একটি ন্যায্য ও বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।’

https://channelkhulna.tv/

আন্তর্জাতিক আরও সংবাদ

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্বের বার্তা, ওয়াশিংটন-দিল্লি বরফ গলছে কি

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ৫৫ বছরে বিশ্বে প্রাণ গেছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের: গবেষণা

পাঁচদিনে তৃতীয় ভূমিকম্প, আফগানিস্তানে মৃত্যু ছাড়াল ২২০০

উড়োজাহাজ ছেড়ে বুলেটপ্রুফ সাঁজোয়া ট্রেনে চীনে গেলেন কিম

ব্রাহ্মণেরা মুনাফাখোর—ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টার মন্তব্যে ভারতে নিন্দার ঝড়

ভয়েস অব আমেরিকার ৫০০ কর্মীকে ছাঁটাই করবে ট্রাম্প প্রশাসন

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ ৫ কেডিএ বানিজ্যিক এলাকা, আপার যশোর রোড, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।