ভারতীয় পার্লামেন্টে এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। বুধবার (২০ আগস্ট) লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থাপন করেছেন সংবিধান সংশোধনী (১৩০তম সংশোধনী) বিল-২০২৫। প্রস্তাবিত এ আইনের মূল কথা—কোনো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি দুর্নীতি বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কমপক্ষে ৩০ দিনের জন্য আটক থাকেন, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ প্রস্তাব সামনে আসতেই উত্তাল হয়ে উঠেছে লোকসভা।
অমিত শাহ দাবি করেন, এ বিলের লক্ষ্য গণতন্ত্রকে আরও স্বচ্ছ করা। তাঁর বক্তব্য, যে মানুষ কারাগারে রয়েছেন, তিনি মন্ত্রিত্ব করলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। নৈতিক দায়বদ্ধতার জন্য পদ থেকে সরে দাঁড়ানোই শ্রেয়। জনগণের আস্থা অটুট রাখতে হলে এমন পদক্ষেপ ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু বিরোধীরা এ ব্যাখ্যা একেবারেই মানতে নারাজ। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, বাম দল থেকে সমাজবাদী পার্টি—সবাই এক সুরে বলছে, এটি সরকারের নতুন রাজনৈতিক অস্ত্র। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ—তদন্ত সংস্থাগুলো কেন্দ্রের অধীনে, তাই যেকোনো নেতাকে অভিযুক্ত করে আটক রাখলেই তাঁর মন্ত্রিত্ব শেষ হয়ে যাবে। এতে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে।
এ বিল নিয়ে অমিত শাহ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন লোকসভা কক্ষে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। বিরোধীরা ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে শুরু করেন—‘এই বিল মানা হবে না’, ‘গণতন্ত্র রক্ষা করো’। কয়েকজন সাংসদ বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, এটি গণতন্ত্র নয়, এটি নির্বাচিত বিরোধীদের গলা টিপে ধরার কৌশল। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর মন্তব্য করেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সাজা দেওয়ার প্রস্তাব ভারতের আইনি কাঠামোর বিরোধী।
হট্টগোল এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, স্পিকারকে একাধিকবার সতর্ক করতে হয়। শেষমেশ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
রাজনৈতিক মহলে এখন তুমুল আলোচনা—আসলে কারা লাভবান হবে এই আইনে? কেউ বলছেন, সরকারের ভাবমূর্তি সাদা রাখার জন্য এটি দরকারি পদক্ষেপ। কেউ আবার মনে করছেন, এটি বিরোধীদের দুর্বল করার ‘সুবিধাজনক অস্ত্র’। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতার রাজনীতিতে এটি এক দ্বিমুখী তলোয়ার—একদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা, অন্যদিকে বিরোধীদের ভয় দেখানোর আশঙ্কা।