সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শুক্রবার , ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
জলবায়ু অভিঘাতে ধুঁকছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম | চ্যানেল খুলনা

জলবায়ু অভিঘাতে ধুঁকছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম

সুমন সাহা :: বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাভাবিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বন্যা, টর্নেডোর মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। ফলে বাংলাদেশের মানুষের জীবন বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ- দু’ভাবেই হুমকির মুখে পড়ছে দেশের নতুন প্রজন্ম। মূলত শিশুরাই সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে সমান্তরালে পাল্লা দিয়ে উপকূলীয় এলাকায় বাড়ছে দুর্যোগের ঝুঁকি। দুর্যোগ মৌসুমে উপকূলবাসী বিভিন্ন ঝুঁঁকি নিয়ে তটস্থ থাকলেও তাদের সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা পরিবারের নতুন শিশু-কিশোরদের নিয়ে।

বাংলাদেশে ক্রমাগত দুর্যোগ আসে আর যায়। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই যেন থামতেই চায় না এ দেশের মানুষের। প্রকৃতির রোষে বারবার ‘উদ্বাস্তু’ হওয়াই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো আইলা, কখনো আম্পান, কখনো বা ইয়াস- ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে বারবার ঘরহারা হয়েছে মানুষ। প্রকৃতিই যেন সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে বারবার। বাংলাদেশের উপকূলের যে কোনো দুর্যোগেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁঁকিতে থাকে শিশু-কিশোররা।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জল, নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে শিশুদের ভোগান্তি অনেক বেশি। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের তালিকায় থাকা উপরের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর জলবায়ু পরিবর্তনের এ ক্ষতিকর প্রভাবের অসহায় শিকারে পরিণত এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রান্তিক শিশুরা। সম্প্রতি, বিশ্বের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ধারণার চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে নতুন প্রজন্ম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ৮৭টি উপজেলার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল সরাসরি ভোগ করছে। ফলে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় এসব এলাকার শিশুরা থাকে সবচেয়ে ঝুঁঁকিতে। নদীভাঙন বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় আবাদি ফসল নষ্ট- যে কোনো ঘটনার প্রভাবেই বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ভোগান্তি বেশি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন আ খ ম মোস্তফা জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইদানীং খুব বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়, তখনো বৃষ্টি হচ্ছে এ দেশে। জলবায়ুর এই আমূল পরিবর্তনে অভিযোজন করতে গিয়ে বেশি দুর্যোগের কবলে পড়ছে শিশুরা। জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার দৈনন্দিন অনুষঙ্গগুলোর গুণগত মান খারাপ করে দেয়। ফলে শিশুরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁঁকির মুখে পড়ে।

বিভিন্ন গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে সামাজিক সমস্যাগুলোকে প্রকট করছে, এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে নতুন প্রজন্ম বা শিশুরা। ইউনিসেফ শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকিসূচক বা চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ দেশের মধ্যে ১৫তম। শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষÑ দু’ভাবেই প্রভাব পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে, বিশ্বে বিদ্যমান রোগের মোট ৮৮ শতাংশ পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সবচেয়ে খারাপভাবে প্রভাবিত হিসেবে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশে ৬০ লাখ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসী রয়েছে। তা ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মোট দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। সর্বদক্ষিণের টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল-কালিন্দী নদী পর্যন্ত এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি জেলা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। দেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বসবাস করে এসব উপকূলীয় অঞ্চলে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ১ কোটি ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের ভেতর ৪৫ লাখ উপকূল শিশু।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫-১৭ বছর বয়সি ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী বিবাহিত। এছাড়া ২০-২৪ বছর বয়সি ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ নারীর ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাবে এসব এলাকার অধিকাংশ শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভোগে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্র ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন মনে করেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা যাবে না। সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। একা- এটি করা সম্ভব নয়।

মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) তথ্য মতে, বাংলাদেশে শিশুদের শৈশবকালীন খর্বাকৃতির হার ২৮ শতাংশ এবং মাঝারি ধরনের ও ভয়বহ পর্যায়ের কম ওজনের হার ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বহু উপকূল শিশু। এসব শিশু উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসে শহরে এবং ভিড়ে যায় ছিন্নমূল শিশুদের দলে। সামাজিক বৈষম্য, নিম্ন জীবনযাত্রা কিংবা ক্ষুধার জ্বালা নিবারণে বাধ্য হয়ে এসব শিশু প্রতিনিয়ত মাদক গ্রহণ, মাদক ব্যবসা, ভিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মেয়েশিশুরা শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, প্রতি মাসে গড়ে ৮৪ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; যা তাদের মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তুলছে। ফলে শৈশবের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বৈষম্য, নির্যাতনের শিকার এবং অধিকার বঞ্চিত হয়ে শিশুরা হারিয়ে ফেলছে বিকশিত হয়ে ওঠার শৈশব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি ও অসময়ে বৃষ্টি, অতি গরম এবং দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রা, তীব্র ঠাণ্ডা ও বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবের্গর তুলনায় এখন শিশুরা বেশি অসুস্থ থাকছে। আবার পরিবারের সঙ্গে উদ্বাস্তু হয়ে বহু শিশু অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছে। সেখানেও তারা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। সব মিলিয়ে শিশুদের বড় একটি সংখ্যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে সামাজিক সমস্যাগুলোকে প্রকট করছে; এতে কম বয়সিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্ধকার এই যাত্রায় নিরাপদ থাকছে না গর্ভের শিশুরাও। এছাড়া ঝুঁঁকিতে পড়ছে নতুন প্রজন্ম। প্রতি বছর বন্যা ও নদীভাঙনে অনেক পরিবারকে শহরের বস্তিতে গিয়ে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে বসবাস করতে হচ্ছে। সেখানে তারা স্বাস্থ্যকর খাবার, শিক্ষা, পর্যাপ্ত স্বাস্থসেবা, স্যানিটেশন ও নিরাপদ খাবার পানির সংকটে থাকেন। এসব বস্তিতে বসবাকারী শিশুরা অপুষ্টির ঝুঁঁকিতে রয়েছে। সেখানে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, সহিংসতা ছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, এখনই জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগামী ২০ বছরে শতকরা ৩২০ ভাগ বাড়বে। এর পাশাপাশি বাড়বে শিশুমৃত্যুর হার।

https://channelkhulna.tv/

পরিবেশ ও জলবায়ু আরও সংবাদ

সহনীয় বাতাস নিয়েও বায়ুদূষণের তালিকায় আজ এগিয়েছে ঢাকা

বৃষ্টি কমিয়েছে দূষণ, ঢাকার অবস্থান ২৯তম

জলবায়ুর পরিবর্তনে দুর্যোগ ঝুঁকিতে উপকূলীয় কলাপাড়ায় কৃষি ও জেলে পেশায় ভয়াবহ সংকট

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানিতে বাড়ছে বিষাক্ততা

জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় উপকূলে লবণ পানি সহনশীল গাছ লাগান

জলবায়ু পরিবর্তন ও কপ ৩০-একটি অস্তিত্ব রক্ষার ডাক

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ ৫ কেডিএ বানিজ্যিক এলাকা, আপার যশোর রোড, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।