সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শুক্রবার , ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
জলবায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় মরছে গাছ | চ্যানেল খুলনা

জলবায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় মরছে গাছ

শেখ জাহিদুল ইসলাম :: উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাবে মরছে গাছ। লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছের উপর প্রভাব পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল জানিয়েছে। সে কারণে রাস্তার দুপাশ দিয়ে এবং বাগানে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন জাতের বড় বড় গাছ মরে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট বরগুনা পিরোজপুর ঝালকাঠি বরিশাল পটুয়াখালী ‌ভোলা লক্ষীপুর চাঁদপুর ফেনী নোয়াখালী চট্টগ্রাম কক্সবাজার এই সমস্ত লবণাক্ত এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পানির পিপিটি অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে নানা পরজাতির ছোট বড় গাছ গাছালি। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন উপকূলীয় অঞ্চলের গাছ-গাছালি যদি মরে সাফ হয়ে যায় তারও একটা বড় প্রভাব পড়বে উপকূলীয় কোটি মানুষের উপর কারণ যখন ছোট বড় গাছ গাছালি উপকূলীয় এলাকায় না থাকবে তখন শীতের দিনে প্রচন্ড শীত পড়বে আবার গরমের দিনে প্রচণ্ড তাপদহ ভোগ করতে হবে। সে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ সহনশীল গাছ লাগানো এক্ষুনি অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন আহমেদ বলেছেন উপকূলীয় অঞ্চলের কোটি মানুষের ভাগ্যে বর্তমান ছয় ঋতুর দেশ আর নেই । বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাত্র দুই ঋতুর দেশে পরিণত হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন আহমেদ। তিনি আরো বলেন দুই ঋতুর মধ্য গ্রীষ্ম আর শীতকাল এই ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে আর কোন ঋতুর প্রভাব পড়ে না। তিনি আরো বলেন এর একমাত্র কারণ জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তন এই জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তন থেকে উপকূলবাসীকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সরকারকে বড় বড় মেগা প্রকল্প হাতে দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিলে দশ বছরের মধ্য উপকূলীয়র অঞ্চলের ঋতু আবার ফিরে আসবে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন আহমেদ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে পটুয়াখালীসহ পুরো উপকূল অঞ্চলে। দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। আশঙ্কাজনকভাবে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। নদ-নদী ও সাগরে বেড়ে গেছে লবণাক্ত পানির মাত্রা। মাত্রারিক্ত লবণাক্ততার কারণে বিবর্ণ ও হলুদ হয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালীর উপকূল অঞ্চলের সবুজ বেষ্টনী। ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে হাজার হাজার বৃক্ষ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে উপকূল অঞ্চলের মানুষ। এখন পুরো উপকূলের কষ্ট নোনাপানি।
এদিকে পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাতেও। সমুদ্রসৈকতের তীরে নয়নাভিরাম সারি সারি ঝাউ ও কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো দিন দিন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এতে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের আকর্ষণ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এসব সবুজ বনরাজির দিকে এখনই নজর না দিলে এক সময়ে বৃক্ষশূন্য হয়ে যাবে কুয়াকাটা এবং হারিয়ে যাবে এই সমুদ্রসৈকতটির অপরূপ সৌন্দর্য। এতে পর্যটকপ্রেমীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের এই সমুদ্রসৈকতটি থেকে।
সিডর, আইলা, রোহানু, বুলবুল, আম্পানসহ দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটাসহ পটুয়াখালীর উপকূল অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার বৃক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, গাছের শ্বাসমূল বালুর আবরণে ঢেকে গেছে। গাছের শ্বাসমূল এভাবে ঢেকে যাওয়ায় এবং সমুদ্রের মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্তার কারণে বৃক্ষরাজি বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন পটুয়াখালীর পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘুরে সবুজ বনায়নের সারি সারি গাছগুলোর এমন চিত্র দেখা যায়।
কুয়াকাটার গঙ্গামতি এলাকার আলী হোসেন বলেন, সৈকতের তীরের সারি সারি কেওড়া, ঝাউসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো প্রথমে লালচে ও বিবর্ণ হয়ে যায়। পরে পাতাগুলো ঝরে পড়ে এবং ধীরে ধীরে গাছ মরে যেতে থাকে। বেশি লবণাক্ততার কারণে এসব গাছ মরে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সত্তরের প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলে বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রথমদিকে ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষরোপণের কাজ সীমিত আকারে থাকলেও ১৯৭৭ সালে উপকূল অঞ্চলে ৭ হাজার ৭০৯ একর ভূমিতে বনায়ন করা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে পটুয়াখালী ও বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় বনভূমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার একর, যা এখন দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার একরে। এর মধ্যে পটুয়াখালী জেলায় রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার একর। শুধু পটুয়াখালী জেলাই ম্যানগ্রোভ বনায়ন রয়েছে ২ হাজার ২২৩ একর ভূমিতে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের প্রফেসর ড. মাহবুব রাব্বানী বলেন, উপকূলের বনায়ন মরে যাওয়া বা গাছ বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি, দ্বিতীয়ত সমুদ্র তীরে অতিরিক্ত বালুর কারণে এ সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে শিকড় নষ্ট হয়ে গাছ বিবর্ণ হয় এবং ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে পাতা ঝরে পড়ে গাছ মরে যায়।
পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানান, তিনটি কারণে গাছ মরে যেতে পারে। প্রথমত জোয়ারের পানি বেড়ে গাছের গোড়ায় বালু জমে শ্বাসমূল ক্ষতিগ্রস্ত হলে, দ্বিতীয়ত দীর্ঘ খরায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এবং তৃতীয়ত দীর্ঘ বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা ও সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে শিকড় নষ্ট হয়ে গাছ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে পাতা ঝরে পড়ে এক সময় গাছটিই মরে যায়।

https://channelkhulna.tv/

পরিবেশ ও জলবায়ু আরও সংবাদ

খুলনায় চার দিনের “তদন্তমূলক জলবায়ু সাংবাদিকতা” প্রশিক্ষণ সমাপ্ত

‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করছে‘

সহনীয় বাতাস নিয়েও বায়ুদূষণের তালিকায় আজ এগিয়েছে ঢাকা

বৃষ্টি কমিয়েছে দূষণ, ঢাকার অবস্থান ২৯তম

জলবায়ুর পরিবর্তনে দুর্যোগ ঝুঁকিতে উপকূলীয় কলাপাড়ায় কৃষি ও জেলে পেশায় ভয়াবহ সংকট

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানিতে বাড়ছে বিষাক্ততা

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ ৫ কেডিএ বানিজ্যিক এলাকা, আপার যশোর রোড, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।