কাপড় ও মোটরসাইকেল কেনাবেচার ব্যবসা করেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক সাগর হোসেন। দুই দশক ব্যবসা করে প্রাচীরঘেরা আধা পাকা বাড়ি তৈরি করেছিলেন। চলতেন দামি মোটরসাইকেলে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন সাগর। তবে এসব এখন তাঁর কাছে শুধুই স্মৃতি। মাত্র এক বছরে অনলাইন জুয়া খেলে বাড়ি ও মোটরসাইকেল বিক্রি করে সর্বস্বান্ত তিনি।
এমন সর্বনাশা জুয়া আর খেলবেন না বলে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গোলাবাড়ি বাজারে বেশ কিছু মানুষের সামনে তিনি দুধ দিয়ে গোসল করেন। সাগর হোসেন ওই এলাকার মো. চাঁদ আলীর ছেলে। পরে রাত ১০টার দিকে সেই গোসলের এক মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন প্লাস্টিকের মগ ও কোমল পানির কাটা বোতল দিয়ে সাগরের মাথায় দুধ ঢালছেন। উৎসুক জনতা তাকে ঘিরে দেখছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্য ধারণ করছেন।
দুধ ঢেলে গোসলের সময় সাগরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ’ প্রিয় ভাই ও আমার বন্ধুরা। আমার ছিল বিলাসিতা জীবন। পান্টি একটা মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। আমি খুব শখ করে একটা বাড়ি করেছিলাম। এই মোবাইলে (জুয়া) খেলা করে আমার শোরুম চলে গেছে, বাড়ি চলে গেছে। আমার এ দৃশ্য দেখে যদি কোন লোক একজন ব্যক্তি ভালো হয়ে যান, ভালো। আমি রিসার্চ করেছি আমার এই মাথায় আমার নিজের কর্ম করা ছিল। আমি কর্ম করি বানাইছিলাম, আল্লাহ পাক আমায় দিছিলো। অসৎ পথে কেউ কোন দিন বড়লোক হতি পারে না, রাতারাতি কেউ বড়লোক হতে পারে না। কোন মানুষ এইটা দেখে (দুধ গোসল) সব শিক্ষাগ্রহণ করবেন জীবনে কেউ জুয়া খেলবেন না।’
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘দেহ শরীর সব নষ্ট করে ফেলেছি। আত্মহত্যার পথ বেছে নিছিলাম। তিনডে মেয়ে সন্তান আছে। সে জন্য আর কোনো দিন এই জুয়ো খেলব না, খেলব না, খেলব না। মোবাইলের জুয়ো আমি কোনো দিন খেলব না। আমি শপথ নিলাম।’
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পান্টি গোলাবাড়ি বাজারের পাশেই সাগরের আধা পাকা বাড়ি। পাকা প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটিতে লোহার গেট। বাড়ির ভেতরে ও প্রাচীরে জ্বলে বাহারি রঙের আলো। বাড়ির ভেতরের কক্ষগুলো সাজানো ও পরিপাটি।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাগর হোসেন জানান, মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। প্রথমে কাপড় কেনাবেচার ব্যবসা ছিল তাঁর। পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুম দিয়েছিলেন। সেখানে পুরাতন মোটরসাইকেল কেনাবেচা করতেন। সবই ভালো চলছিল। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হতো। প্রায় ২১ বছর ধরে সৎ পথে আয় করে বাড়ি, মোটরসাইকেল করেন। কিন্তু মাত্র এক বছরে অনলাইন জুয়া ‘ওয়ান এক্স বেট’ ও ‘গ্লোরি ক্যাসিনো’ খেলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ধারদেনা করেও জুয়া খেলেছেন। ২১ লাখ টাকায় বাড়ি এবং ১৫ লাখ টাকার শোরুম বিক্রি করেও দেনা শোধ করতে পারেননি।
তাঁর ভাষ্য, ব্যবসা বন্ধ করে ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে জুয়া খেলতেন। পরে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েও এখনো সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেনা। গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে দুধ দিয়ে গোসলের আয়োজন করে। সাগর আরও বলেন, পান্টি এলাকার শত শত মানুষ এই জুয়া খেলেন। আর কেউ যেন লোভে পড়ে সর্বস্বান্ত না হন। সে জন্য তিনি মানসম্মান ত্যাগ করে জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন। জুয়ায় তিনি একদিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর হেরেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা।
যাওয়ার জায়গা নেই তাই ক্রেতার সম্মতিতে এখনো বিক্রীত বাড়িতেই থাকছেন তিনি। সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন বলেন, ‘অনলাইন জুয়ায় বাড়ি, মোটরসাইকেল, গহনা, আসবাবপত্র, সম্পদ সব চলে গেছে। আর কেউ কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়।’