
নিজেদের কন্যা সন্তানের জন্মকে স্বাগত জানাতে এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে একটি করে ফলের গাছ বিতরণের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নে কালশিরা গ্রামের মাধব-সাথী দম্পতি। নিজেদের একমাত্র কন্যা সন্তান সম্প্রীতি ব্রহ্ম মৌলীর জন্মকে স্মরণীয় করে রাখতে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে শনিবার (৮ নভেম্বর) নিজ গ্রামের দুইশতাধিক ব্যক্তির হাতে আম, জাম, পেয়ারা, কাঁঠাল, লিচু, বেল, সফেদা, কদবেল, কালো জামসহ বিভিন্ন ধরণের দুই শতাধিক গাছের চারা তুলে দেন। এর আগেও ২০২৪ সালে ওই দম্পতি নিজেদের বৌভাত অনুষ্ঠানের খরচ কিছুটা সীমিত করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ৫ শতাধিক বই বিতরণ করেছিলেন।
ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করা মধাব-সাথী দম্পত্তির ঘর আলোকিত করে চলতি বছরের ২০ মে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কন্যার নাম রাখা হয় সম্প্রীতি ব্রহ্ম মৌলী। মৌলী জন্ম গ্রহণ করার পর থেকে এই দম্পতি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন, তাদের কন্যা সন্তানের জন্মকে স্বাগত জানাতে তারা গ্রামের সকল বাড়িতে একটি করে ফলের চারা উপহার দিবেন। যাতে করে এলাকার সবুজায়নে যেন তাদের সন্তানের কিছুটা অবদান থাকে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তারা একটু একটু করে টাকা জমাতে শুরু করেন। একই সাথে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নবজাতক সন্তানের জন্য পাওয়া উপহারের টাকা জমিয়ে গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার জন্য গত ৭ ও ৮ নভেম্বর কালশিরা গ্রামের নিজ বাড়িতে এ গাছের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বিতরণকৃত এসব গাছের মধ্যে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল কলমের আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বেল, সফেদা, কদবেল, কালো জাম, আপেলকুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ। গত শক্রবার ও শনিবার এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে নিজেদের সাড়ে ৫ মাস বয়সী মেয়ে সম্প্রতি ব্রহ্ম মৌলীকে সাথে নিয়ে এ ফলের চারা তুলে দেন।
এ ব্যাপারে মাধব চন্দ্র ব্রহ্ম বলেন, ‘ তার সন্তান যে গ্রামে বড় হবে, সে গ্রামের আলো-বাতাস যেন নির্মল থাকে। গ্রামের সবুজায়নে যেন তার কিছুটা হলেও অবদান থাকে। তার সন্তানের সাথে এই গাছগুলো একটু একটু করে বড় হবে। ফলে ফলে ভরে উঠবে পুরো গ্রাম। এ ছাড়াও তার সন্তান বাতাসে যে কার্বন নিসঃরণ করবে তা তাদের দেওয়া গাছ থেকে যে পূর্ণ হয়। ভালো লাগার এইসব অনুভূতি থেকে তিনি ফলের চারা বিতরণের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহন করেন।
গাছের চারা নিতে আসা নারদ রায় নামের এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, মধাব ব্রহ্ম ছাত্র অবস্থা থেকে এলাকায় ‘ জ্ঞানের বাতিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সে নিজের অর্থায়নে বইক্রয় করে বাড়িতে একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছে। সপ্তাহে দুই দিন সে বাড়ি বাড়ি যেয়ে বই বিলায়, বই পড়ায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। গাছ বিতরণ করে, আশপাশের গ্রামে কোনো নতুন শিশু জন্ম নিলে তাদের বাড়িতে গাছ উপহার দেয়। কেউ পড়া-লেখায় আর্থিক সংকটে পড়লে থাকে সহযোগিতা করে। তার এ সকল কর্মকাণ্ড এলাকায় আলোকিত মানুষ গড়তে ভূমিকা রাখছে। আমরা মধাব-সাথী দম্পতি ও তাদের সন্তান সম্প্রতির জন্য প্রাণ ভরে আশির্বাদ করি।


