ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চান্দুরিয়া ও হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের চাপসারা সীমান্ত দিয়ে আরও ২৪ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। তাদের জমানো টাকা-ব্যাগ সব রেখে দিয়েছে তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চান্দুরিয়া সীমান্তে। পরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) তাদের আটক করে যাচাই-বাছাই শেষে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বয়স চল্লিশের কোঠায়, মুখে ক্লান্তির ছাপ। নাম বলতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন দিনাজপুরের রেজাউল ইসলাম। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে গিয়ে কাজ করতেন দিনমজুর হিসেবে। তিনি বলেন, দুই বছর কাজ করে যা জমানো হয়েছিল, সবই ছিল একটা ব্যাগে। বিএসএফ আমাদের কিছু আনতে দিল না। শুধু গেট খুলে বলল- চলে যাও।
একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের আবেদ আলীর ছেলে আফজাল হোসেন (৩২)। তার কণ্ঠে ক্ষোভ- আমরা কোনো অপরাধ করিনি। বৈধভাবে পাড়ি দিয়েছিলাম কাজের খোঁজে। এখন কিছু না নিয়ে ফিরে আসতে হলো। বিজিবি আমাদের মানবিকভাবে দেখছে, তবু ভেতরে কষ্টটা রয়েই গেল।
তিনি জানিয়েছেন, আমাদের হরিপুর উপজেলার লাগুয়া ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মহাকুমা শহরে কয়েকশ মানুষকে জড়ো করে রেখেছে ওই দেশটির প্রশাসন। সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে তাদের পুশইন করবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজির আহম্মদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে পুশইনের প্রবণতা বেড়েছে। তাই সীমান্ত এলাকায় নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
তিনি জানান, পুশইনের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় যে কোনো সন্দেহজনক তৎপরতা দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবিকে জানানোর জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।
বিজিবি কর্মকর্তার ভাষ্য, সীমান্ত সুরক্ষা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা আমাদের বড় শক্তি।
হরিপুরের চাপসারা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, বছর দুয়েক আগেও এ ধরনের ঘটনা হতো না। এখন প্রায়ই দেখি কিছু লোক আসে, বিজিবি ধরে নিয়ে যায়। মাঝে-মাঝে গুলি বা শব্দ শুনলেও ভয়ে কিছু বলতে পারি না।
স্থানীয় চা দোকানি আমিনুল ইসলাম জানান, বহিরাগতদের আনাগোনা মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। আমরা ভয়েও কিছু বলি না। তবে বিজিবি এখন নিয়মিত টহল দিচ্ছে, তাতে এলাকার মানুষ কিছুটা নিশ্চিন্ত।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মৌসুমী আক্তার বলেন, সীমান্তে পুশব্যাক বা পুশইন এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্ত নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এ প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এ পদ্ধতি চলে আসছে; যা অমানবিক এবং নিষ্ঠুরতা।