ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিকশাচালক আজিজুর রহমানের বৃদ্ধ মা-বাবা ও ছোট ভাই সবাই প্রতিবন্ধী।
আজিজুর রহমানের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল গ্রামে। ওই গ্রামের মধ্যপাড়ার আতিয়ার মণ্ডলের বড় ছেলে তিনি। গ্রামে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের মধ্যে বৃদ্ধ মা-বাবা ও এক ভাই রয়েছেন। তাঁরা সবাই শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তিন বছর আগে গ্রাম ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যান আজিজুর রহমান।
রোববার (১৭ আগস্ট) আজিজুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশে জঙ্গলে ঢাকা একটি জরাজীর্ণ টিন ও পাটকাঠির ছাপড়া ঘরের মধ্যে বসবাস করেন আজিজুরের মা-বাবা। বৃদ্ধ বাবা আতিয়ার রহমান ও মা নুরি বেগম শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ভাই ইঞ্জিল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আজিজুরের গ্রেপ্তারের খবর শুনে তাঁদের চোখেমুখে অনিশ্চয়তার চিন্তার ছাপ দেখা যায়। ছেলেকে মারধর আর গ্রেপ্তারের ভিডিও মোবাইল ফোনে দেখার পর থেকে অঝোরে কাঁদছিলেন মা।
এলাকাবাসী ও আজিজুরের স্বজনেরা জানান, স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডি না পেরোতেই আজিজুরকে সংসারের হাল ধরতে হয়। কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারী, আবার কখনো অন্যের জমিতে কাজ করে বাবার সংসার চালাতেন। তিন বছর আগে জীবিকার সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যান আজিজুর। সেখানে রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন হতো, তা দিয়েই চলত তাঁদের সংসার। পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা দিয়েই অসুস্থ মা-বাবা ও ভাই কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলেন। কিন্তু আজিজুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর পরিবারের চুলায় আগুন জ্বলছে না। না খেয়ে দিন কাটছে তিনজনের। বৃদ্ধ মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা খাবার পাচ্ছেন, তা খেয়ে পার হচ্ছে দিন।
স্বজনেরা বলছেন, আজিজুর কখনোই কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আজিজুর দ্রুত মুক্তি না পেলে তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে দিন পার করতে হবে।
আজিজুর রহমানের মা নুরি বেগম বলেন, ‘ছেলের পাঠানো টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালে। ভাঙাচোরা ঘরে থাকতে কষ্ট হয়। তার ওপর আমরা তিনজনই অসুস্থ। ছেলে টাকা না পাঠালে না খেয়ে মরতে হবে। আজিজুর কোনো দিন রাজনীতি করেনি। ছোটবেলা থেকেই কর্মঠ ছিল। কেন যে ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গেল ছেলেটা। মোবাইলে মারধরের ভিডিও দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। রাতে ঘুম হচ্ছে না। ছেলের ওপর হামলা হচ্ছে—এমন ভিডিও দেখে কোনো মা কি সহ্য করতে পারে? আজিজুরকে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’
আজিজুরকে মারধর ও গ্রেপ্তারের ভিডিও দেখে কাঁদতে কাঁদতে আজিজুরের বাড়িতে এসেছেন তাঁর খালা সিকারুন বেগম। বোনের ছেলের সঙ্গে এমন ঘটনায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়েছে তাঁরও। তিনিও দ্রুত আজিজুরের মুক্তি চান।