ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একই দিনে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুর মধ্যে সিফাত হাসানের (১১) পর এবার মো. আয়মান আকন্দ সাদাবের (৫) লাশ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে উপজেলার পাগলা থানার দিঘীরপাড় এলাকায় নানাবাড়ির পাশের জঙ্গলে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন এবং অর্ধগলিত অবস্থায় সাদাবের লাশ পাওয়া যায়। গত শুক্রবার শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের কাছে থেকে তিন দফায় মুক্তিপণ আদায় করে একটি চক্র।
সাদাব পাশের নান্দাইল উপজেলার বারগুড়িয়া গ্রামের প্রবাসী আল আমিনের একমাত্র ছেলে। সে তার মা সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে দিঘীরপাড় গ্রামে নানা সুলতান মিয়ার বাড়িতে থাকত।
নানা সুলতান জানান, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাইকের শব্দ শুনে বাড়ির সামনের দোকানে গিয়েছিল সাদাব। এরপর তার আর খোঁজ মিলছিল না। বাড়ির আশপাশের পুকুর-ডোবা, স্বজনদের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই পাগলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
আজ সকালে প্রতিবেশী সোহাগ মিয়া গরু চরাতে গিয়ে দেখেন, জঙ্গলের পাশে পুকুরের পাড়ে এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে স্বজনেরা সেটি সাদাবের লাশ বলে শনাক্ত করেন।
অপহরণকারীরা সাদাবকে মুক্তি দেবে বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তিন দফায় ২৮ হাজার টাকা নেয় জানিয়ে নানা সুলতান বলেন, ‘তোরা মুক্তিপণের টাকা নিয়াও আমার নাতিডারে মাইরা ফালাইলি!’
সুলতানের আত্মীয় মোফাজ্জল হোসেন জানান, তিন দফায় মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর পর মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ করে দেয় অপহরণকারীরা।
সাদাবের মা সুমাইয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার একমাত্র নিষ্পাপ ছেলে কী অন্যায় করেছে? তাকে এভাবে অপহরণ করে দাবি করা টাকা নিয়েও কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের বুক খালি করেছে। আমি আমার নিষ্পাপ ছেলে সাদাবের খুনিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই।’
অন্যদিকে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে পাগলা থানার চরশাঁখচূড়া গ্রামের সৌদিপ্রবাসী নূর ইসলামের ছেলে সিফাত বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। তার পরিবারের কাছেও মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। তখন সিফাতের ভাই জিসান একটি নম্বরে ২ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। পরদিন শনিবার সকাল ১০টার দিকে সিফাতের লাশ বাড়ির প্রায় ২০০ গজ দূরে স্থানীয় রশিদের পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
সাদাবের ব্যাপারে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
মুক্তিপণের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘টাকা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। নম্বরগুলো র্যাবকেও দেওয়া হয়েছে। ওরা প্রতারক চক্র। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকা থেকে তারা প্রতারণা করছে।’
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এসব ক্ষেত্রে অপহরণকারীদের চেয়ে প্রতারক চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। কোথাও কেউ নিখোঁজ হলে প্রতারকেরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা দোকানের এজেন্ট নম্বর ও ভুয়া এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়ে প্রতারণা করে। এ জন্য তিনি শিশুদের মা-বাবাকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।