বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে নেতৃত্বদানের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আজ ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো একটি উচ্চপর্যায়ের সেমিনার। আয়োজনটি ছিল পরিবেশ অধিদপ্তর (DoE), জাতিসংঘের ইউএনওপিএস (UNOPS) এবং বিমসটেক (BIMSTEC)-এর যৌথ উদ্যোগে।
“বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ রোধে সমাধান ত্বরান্বিতকরণ” শীর্ষক সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, তরুণ উদ্যোক্তা, গবেষক ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একত্রিত হয়ে টেকসই সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। এই উদ্যোগ ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারটি উদ্বোধন করেন ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরণ। এতে বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বিমসটেক মহাসচিব ইন্দ্র মণি পাণ্ডে এবং সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এনডিসি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮৭,০০০ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক পরিবেশে প্রবেশ করছে, যা দেশের জন্য একটি গুরুতর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধারা নতুনভাবে ভাবার এখনই সময়। এই প্রেক্ষাপটে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনাটি বাংলাদেশের টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২০–২০৩০) বাস্তবায়নে অঙ্গীকারকে আরও জোরদার করে। এই কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হলো—২০২৬ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ৩০% হ্রাস, ৫০% পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নির্দিষ্ট একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ৯০% বিলুপ্তি সাধন।
প্যানেল আলোচনায় উদ্ভাবনী অর্থায়ন পদ্ধতি এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আচরণগত পরিবর্তনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়াও, জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা বাস্তবায়ন, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে নতুন উদ্ভাবন এবং প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে মূল্যবান মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়।
এই আয়োজনের প্রত্যাশিত ফলাফলের মধ্যে রয়েছে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র (Joint Communiqué) এবং সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে পাইলট প্রকল্প চিহ্নিতকরণ। এছাড়াও, এই আয়োজনের লক্ষ্য হলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে উৎসাহ দেওয়া, সবুজ অর্থায়ন (green financing) বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে সহায়তা করে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য (circular) অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করা।
বক্তাদের বক্তব্য থেকে:
“প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা, যা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করতে BIMSTEC আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।”— ইন্দ্র মণি পাণ্ডে, মহাসচিব, বিমস্টেক
“শিল্প উন্নয়নের প্রতিটি স্তরে আমাদের টেকসই ভাবনাকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পরিবেশগত দায়িত্ব এবং শিল্প খাতের রূপান্তরকে একসূত্রে আনতে এই সেমিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” —মো. ওবায়দুর রহমান, সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের
“পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের প্লাস্টিক কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে আমরা নতুন উদ্ভাবন, জবাবদিহিতা এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।” —ড. মো. কামরুজ্জামান এনডিসি, মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
“প্লাস্টিক দূষণ শুধুমাত্র পরিবেশের সমস্যা নয়—এটি একটি অবকাঠামোগত এবং আচরণগত চ্যালেঞ্জ, যা সাহসী ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের এমন কার্যকর সমাধান এবং আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বড় লক্ষ্যগুলোকে বাস্তব পরিবর্তনে রূপান্তর করতে ইউএনওপিএস সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। — সুধীর মুরালিধরন, কান্ট্রি ম্যানেজার, ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটান
প্লাস্টিক দূষণ যখন প্রকৃতি, অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে, তখন ইউনাইটেড নেশনস ও BIMSTEC এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতায় একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। যেখানে পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত ও ভবিষ্যতমুখী নীতিমালা গড়ে তোলা হবে।