ডুমুরিয়া উপজেলার শ্রাবণের অবিরাম বৃষ্টি দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে জেলার নয় উপজেলার শতাধিক গ্রাম। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। কোনো কোনো স্থানে কোমর পানিও উঠেছে। পানিতে ডুবে গেছে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের রেজিস্ট্রি অফিস চত্বর।সরেজমিনে দেখা গেছে, পাইকগাছার তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম, কয়রার সাতটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা, রূপসা, দিঘলিয়া, ফুলতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিল-বাওড়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।আবহাওয়া অধিধপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর দেরিতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন থেমে থেমে কখনও গুড়িগুড়ি, কখনও হাল্কা ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
একটানা বৃষ্টির ফলে খুলনার নয় উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলার চারা নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষেতের সবজি। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ও মাছের ঘের। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ডুমুরিয়া: ডুমুরিয়া উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির মাছের ঘের, সবজির ক্ষেত, চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা এখন পানির নিচে। ধসে পড়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি। বিপাকে পড়েছে
এলাকার কৃষকসহ দরিদ্র পরিবারগুলো। ডুমুরিয়া সদরসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে দেড় থেকে দুই ফুট পানি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় নদী-খালে প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলদারিত্বই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। এ উপজেলায় ১৬ হাজার গলদা, আট হাজার বাগদা, পাঁচ হাজার পুকুর, সরকারিভাবে বরপিটের আওতায় ২৩টি মাছের খামার, দুই হেক্টর জমিতে বিল নার্সারী ও বাণিজ্যিকভাবে ৫৩টি ঘেরে মাছ চাষ চলছিল। অতি বর্ষণে এলাকায় মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। সকল মাছের খামার পানিতে ডুবে একাকার। মাগুরখালী, ডুমুরিয়া, গুটুদিয়ার মাছ চাষী নজরুল ইসলাম, নিমাই মণ্ডল ও কার্ত্তিক সরকার জানান, তারা সাত থেকে নয় বিঘা জমিতে মাছ
চাষ করেছিলেন, সব মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের মাছ রক্ষায় অবশেষে নেট জাল ব্যবহার করেও মাছ রক্ষা করা যায়নি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, এ উপজেলায় ১৯শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছিল। এছাড়া চলতি আমন ধানের বীজতলা প্রস্তুত ছিল ৬শ’ হেক্টর জমিতে। অধিকাংশ সবজির ক্ষেত ও ধানের বীজতলা এখন পানির নিচে।