বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেছেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আলেম সমাজের অংশগ্রহণ এবং বিপ্লবী ভূমিকা বিশ্বের দরবারে সময়ের জীবন্ত ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিশেষ করে ১ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট উলামায়ে কেরামের নির্ঘুম রাত, কারফিউ-জরুরী অবস্থা, শার্টডাউন, মূষলধারে বৃষ্টি সব কিছুই উপেক্ষা করে ভোররাত থেকেই আল্ল¬াহর সাহায্য চেয়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে একাকার হয়ে ময়দানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ। ঐক্যবদ্ধ গণ অভ্যুত্থানের বিনিময়ে মহান আল্ল¬াহ তাআলা আমাদের জন্য যে স্বাধীনতা দিয়েছেন তা যেন টেকসই হয় সে তাওফিক কামনা করছি। সকল স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর দৃশ্যমান বিচার, কাংখিত সংস্কার ও অপরাধ মুক্ত ইনসাফভিত্তিক মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সকল মতের আলেম-উলামাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরীর উলামা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-উলামা পীর-মাশায়েখ এবং মাদরাসা ছাত্রদের ভুমিকা ও বর্তমান করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
খুলনা মহানগরীর উলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা মুহাদ্দিস আবু বকর সিদ্দিক এর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। সভায় আলোচনা করেন ও উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দারুল উলুম কওমী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মো. গোলাম ক্বিবরিয়া, ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দারুল উলুম কওমী মাদরাসার হেড মুহাদ্দিস মাওলানা নাসির উদ্দীন কাসেমী, খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ড. আব্দুর রহিম, ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালিমুল মিল্লাত রহমানিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এ এফ এম নাজমুস সউদ, খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. ডি এম নুরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাওলানা মো. জাফর সাদিক আনসারী , বিশিষ্ট মুফাস্সির ও ওয়ায়েজিন মাওলানা মো. আব্দুল গফ্ফার, খুলনা সদর থানা সভাপতি ডা. হাফেজ মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ মানসুর, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি মাওলানা মো. সফির উদ্দিন, খালিশপুর থানা সভাপতি মাওলানা মো. শাহজাহান আলম, দৌলতপুর থানা সভাপতি মাওলানা হাবিবুর রহমান, লবণচরা থানা সভাপতি মাওলানা গাজী আল আমিন, আড়ংঘাটা থানা সভাপতি মাওলানা মো. মেহদি হাসান, সদর থানা সেক্রেটারি মাওলানা মো. জাহিদুল হক, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা নূর সাঈদ জালালী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, ছাত্র প্রতিনিধি মাওলানা মো. নাঈমুল ইসলাম, জুলাই আহত যোদ্ধা মো. রেদওয়ানুল হক, খুলনা আলিয়া মাদরাসার ছাত্রশিবির সভাপতি মো. শিবলুর রহমান প্রমুখ।
মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক আরও বলেন, যুগে যুগে সব ধরনের বিভেদ-বৈষম্য, জুলুম, শোষণ ও অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে, দেশ ও জাতির কল্যাণে আলেম সমাজের গৌরবদীপ্ত ইতিহাস অবিস্মরণীয়। যখনই কোনো জালিমের উত্থান হয়েছে আলেম সমাজ সবধরনের ভয়কে জয় করেই তার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছেন। ভারত বর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আযাদী আন্দোলন, হাজী শরীয়তুল¬াহর ফরায়েজী আন্দোলন, জমিদার প্রথার বিরুদ্ধে শহীদ হাফেজ নিসার আলী তিতুমীরের বাঁশের কেল্ল¬া আন্দোলন, ষাটের দশকে স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০০০ সালে ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের আন্দোলন, ২০০৭ সালে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নারী নীতির সংশোধনের আন্দোলন, ২০০৯ সালে ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ২০১০-১১ সাল থেকে ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি ও কুরআন বিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলনে ওলামায়ে কেরাম সবসময় সক্রিয় ছিলেন। ২০১৩ সালে নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী শাপলা চত্বরের রক্তিম ট্র্যাজেডি, ২০২১ সালে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনসহ আলেম-উলামা ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের রক্তদান, কারাবরণ ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা কারোর অজানা নয়। বিগত ১৭ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক পিরিয়ডেও দেশের বহু ওলামায়ে কেরাম শাহাদাৎবরণ করেছেন।
নির্মমভাবে কারাভোগ করেছেন। শিকার হয়েছেন হামলা-মামলার। তবুও দমে যাননি জাতির পথপ্রদর্শক ওলামায়ে কেরাম। আল্ল¬ামা খতীব উবায়দুল হক (রহ.), আল্ল¬ামা মুহিউদ্দিন খান (রহ.), মুফতি আমিনী (রহ.) সহ শীর্ষ উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে তখন আমরা ময়দানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি।
অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করে। যা বিশ্ব ইতিহাসের একটি গৌরবময় আখ্যান। দুই হাজার শহীদ, প্রায় অর্ধ লক্ষ আহত-পংগু ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে সৃজিত হয়েছে নতুন গৌরবময় ইতিহাস। দূর্নীতি মুক্ত আদর্শিক মানবিক সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে যুগান্তকারী এই ইতিহাস বিনির্মাণে অংশ নিয়েছে জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে দেশপ্রেমিক আলেম সমাজ। তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্ল-বে আলেম সমাজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদান জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আলেমদের নেতৃত্বে, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। ধর্মীয় নেতারা শুধু মসজিদের মিম্বরেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তারা রাস্তায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন।’
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল গণআন্দোলন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘ শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পুনর্জাগরণ। ইসলামের ন্যায়পরায়ণতা ও নৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আলেম সমাজ সে সময় গণআন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমান সময়েও এ ঐক্য ও সচেতনতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহবান জানান।