২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে—এমন ভয়াবহ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। খুলনায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধানের উৎপাদন কমবে ৮ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন কমে যেতে পারে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।
বছরে প্রায় ৬৮ হেক্টর আবাদি জমি অনাবাদিতে পরিণত হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
বুধবার (২৮ মে) খুলনা কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি’ শীর্ষক এ সেমিনারে কৃষি বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। টেকসই উপকূলীয় বাঁধ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকল্প জীবিকার উৎস গড়ে তুলতে না পারলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. এস এম ফেরদৌস। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শুধু উৎপাদন নয়, কৃষকদের জীবিকা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা এবং স্থানীয় অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি ঢাকার প্রধান তথ্য অফিসার কৃষিবিদ বি এম রাশেদুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির খুলনা আঞ্চলিক অফিসার বিভাস চন্দ্র সাহা।
বক্তারা বলেন, কৃষিকে বাঁচাতে হলে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি, ফসলের ডাটাবেজ তৈরি, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মৎস্য ও পশুপালনের মতো বিকল্প জীবিকায়ও গুরুত্ব দিতে হবে।
সেমিনারে অংশ নেন কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্পের পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি এবং কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার শারমিনা শামিম।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের ছয়জন উপজেলা কৃষি অফিসারকে কৃষি কথার গ্রাহক তৈরিতে অবদানের জন্য সনদপত্র এবং দুইজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সেমিনারের আয়োজন করে খুলনা কৃষি তথ্য সার্ভিস। এতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার কৃষি ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।