নগরের প্রাণকেন্দ্রে আবাসিক এলাকা মির্জাপুর। অসংখ্য সুউচ্চ ইমারতের পাশে বস্তি ঘরে হাজারো মানুষের বসবাস। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে কর্মক্লান্ত মানুষ যখন গভীর ঘুমে, ঠিক সেই সময় দাউ দাউ করে জ¦লে ওঠে আগুন। রহমান ছাতা কোম্পানীর সাত তলা ভবনের চার তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত, যা কিছু সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে যায় অন্যান্য তলাতেও। টের পেয়ে কেউ কেউ যখন চিৎকার করছে ততো সময়ে নিকষ কালো ধোঁয়া গ্রাস করেছে গোটা অঞ্চল। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গা আতঙ্কিত মানুষ মাথার ওপর ঝুম বৃষ্টি, চোখের সামনে কালো অন্ধকার আর নিঃশ্বাসে ভয়ংকর পোড়া গন্ধ নিয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকেন দিকবিদিক।
এমনই এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশন থেকে একে একে আটটি ইউনিট এসে সাড়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ছাতা তৈরি ও মালামাল রাখার গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত এই বহুতল ভবনে যাওয়ার পথ অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় কাজ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় ফায়ার ফাইটারদের। তবে অগ্নিকান্ডে কেউ হতাহত হয়নি।
আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোঃ জাকির হোসেন সকালে জানান, আগুনে দুটো বিল্ডিংয়ের পাঁচটি তলা পুড়ে গেছে। সেখানে দুটি বিল্ডিং আছে। প্রথম বিল্ডিংটির তিন তলা ও চার তলা পুড়ে গেছে। পাশে দ্বিতীয় আর একটি বিল্ডিং এর তিন, চার ও পাঁচতলা পুড়ে গেছে। এখানে রহমান ছাতা কোম্পানীর গুদাম ও কারখানা ছিলো।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেইন রোডের সাথে একটি পুরনো তিনতলা ভবন। রহমান ছাতা কোম্পানীর মালিকের আদি ঠিকানা এটি। ব্যবসা বৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনের সাথে সাথে পেছনে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জমি কিনে হাকিয়েছেন আরও দুটি বিশাল আয়তনের বহুতল বাড়ি। সেখানে যাওয়ার জন্য রয়েছে অতি সংকীর্ণ একটি পায়ে হাটা পথ। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ^জিৎ দে বিশু বলেন, রাত দেড়টার দিকে টের পাই আগুন লেগেছে। সে সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। তার ভেতরে আগুন বিল্ডিংয়ের এক স্থান থেকে দ্রæত অন্যস্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তাপে বিকট শব্দে থাইগøাস ভেঙ্গে টুকরো হয়ে নিচে পড়তে থাকে। চারতলার পূর্ব দিক দিয়ে আগুন শুরু হয়ে পশ্চিম দিকে এবং পরে উপরের তলাতে ছড়িয়ে যায়। প্রচুর কালো ধোঁয়া, বিকট আওয়াজে গøাস ভেঙ্গে পড়ায়, আশেপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে শত শত মানুষ ওই রাতে রাস্তায় বেরিয়ে এসে ছোটাছুটি শুরু করে। নারী, শিশু ও বয়স্করা আশেপাশের ঘরবাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
পেছনেই সুকর্ণর ভাড়াটিয়া ঘর। প্রায় ১৫ ভাড়াটিয়া পরিবার এখানে বসবাস করে। তারা কেউই রাতে ঘুমাতে পারেননি। শিশুদেরকে অন্য বাড়িতে রেখে আসেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, জনবসতি এলাকায় এমন একটা ঘটনা মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এবং জনবসতি এলাকায় কারখানা ও গোডাউন চালানোর অনুমতি আছে কিনা জানতে কোম্পানীর মালিক মো: আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনেও সাড়া দেননি তিনি। বাড়ির মেইন গেট ও নিচতলায় অবস্থান নেওয়া কোন কর্মচারীও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. মতিউর রহমান বলেন, ভবনটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেও সময় লেগেছে। সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তাও ছিলনা। অন্য বাড়ির ছাদে বা টিনের চালে উঠে পানি মারতে হয়েছে। শুনেছি দুই তিনশ মানুষ এখানে কাজ করে। ছাতার কাপড়, ক্যামিকেল, শিক, প্লাটিকের বাট মজুদ আছে। সবগুলো দাহ্য বা অতি দাহ্য পদার্থ। সারা রাত কাজ করে সবাই ভীষণ ক্লান্ত। ফলে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়নি। তদন্ত করে বলতে পারবো। তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, এখানে কারখানা স্থাপনের অনুমতি কিভাবে পেলেন তা আমার বোধগম্য না।