খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক স্কুলের উদ্যোগে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় কলা ও মানবিকীবিদ্যা’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। শনিবার (২ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম।
এসময় তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব সংঘাত ও বিভাজনের মুখোমুখি। এই প্রেক্ষাপটে শান্তি কেবল আইন বা রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে টেকসই হয় না। এটি আসতে হবে মানুষের অন্তর থেকে, তাদের আবেগ, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও যৌথ মানবতা থেকে। এই জায়গায় কলা ও মানবিকবিদ্যার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী ও তরুণরা শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে শক্তিশালী কণ্ঠে নিজেদের প্রকাশ করেছে। গান হয়ে উঠেছিল তাদের আশার হাতিয়ার। দেওয়ালের গ্রাফিতি ছিল সাহসের বার্তা। ছোট ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখনী ছড়িয়ে দিয়েছিল তাদের গল্প সারা বিশ্বে। এগুলো কেবল প্রতিবাদের কর্ম ছিল না, বরং শিল্পের রূপে একটি ঐক্যের আহ্বান, শান্তির সংগ্রামে প্রেরণার প্রতীক।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষা কেবল কারিগরি দক্ষতা শেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি হতে হবে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও বৈশ্বিক সচেতনতার শিক্ষা। এই মূল্যবোধগুলো বিকাশ লাভ করে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি এবং সৃজনশীল শিল্পের মাধ্যমে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এই মূল্যবোধগুলো প্রতিষ্ঠা করতে ইন্টারডিসিপ্লিনারি শিক্ষার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোলাবরেশনের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান। তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় কলা ও মানবিকবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাহিত্য ও ইতিহাস মানুষের সহমর্মিতা, সংস্কৃতি, জাতীয় পরিচয় ও সমালোচনাশক্তি গড়ে তোলে। তিনি গবেষণার চ্যালেঞ্জ, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা ও ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের সম্মেলন গবেষকদের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন পথ নির্মাণেও ভূমিকা রাখবে। তিনি সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।
কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান কবীর এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান শাহীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ দুলাল হোসেন ও ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক হামালনা নিজাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কলা ও মানবিক স্কুলের পরিচিতিমূলক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়া সম্মেলনের অতিথি ও কী-নোট স্পিকারের হাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
উদ্বোধনী অনুুষ্ঠানের পর কী-নোট স্পিকার হিসেবে সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি সেইন্স মালয়েশিয়ার আর্টস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ কামারুল কাবিলান বিন আব্দুল্লাহ। তিনি সহযোগিতামূলক, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শান্তিশিক্ষা বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
পরে কী-নোট স্পিকার হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আজম। তিনি শান্তি ও ন্যায়-প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের উন্নতিতে কলা ও মানবিকবিদ্যার ভূমিকা শীর্ষক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন।
আগামীকাল রবিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কী-নোট স্পিকার হিসেবে আলোচনা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান।
দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনে ১৬৫টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। সম্মেলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ দেশি-বিদেশি তিন শতাধিক গবেষক অংশগ্রহণ করেন।