‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যে দিনে কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে, সেই দিনেই জাতীয় শ্রমিক শক্তি রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, রাজপথের শক্তিই জয়ী হয় এবং এনসিপি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে।
আজ শুক্রবার ‘ঐক্য, সংগ্রাম, মর্যাদা ও মুক্তির পতাকা হাতে শ্রমিকের রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী অঙ্গীকার’ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অঙ্গসংগঠন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’। সকালে রাজধানীর বাংলামোটরের ইস্কাটন নেভি কলোনিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম।
এই নতুন শ্রমিক সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে মাজহারুল ইসলাম ফকির, সদস্যসচিব হিসেবে রিয়াজ মোরশেদ এবং মুখ্য সংগঠক হিসেবে আরমান হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অনেক কমিশন গঠিত হলেও শ্রম কমিশন বা স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের জীবনের সঙ্গে যে গণসেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জড়িত তার সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে। সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য ভালো কিছু দেখতে পারছি না।’
বিগত শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন এবং ন্যায্য মজুরির জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে তাদের প্রাণ দিতে হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম রাজনৈতিক দলের ঐক্যকে ‘জাতীয় ঐক্য’ হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁর মতে, প্রকৃত জাতীয় ঐক্য হলো ‘যখন সমাজের সব অংশের মানুষ দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এক হয়ে লড়াই করে। যেটা আমরা দেখেছিলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। সেসময় কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার দেখিনি। শুধু দেখেছিলাম ছাত্র-শ্রমিক এবং নানান পেশাজীবী।’ তিনি অঙ্গীকার করেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক রূপান্তরেও ছাত্র, শ্রমিক এবং সব পেশাজীবী মানুষ এক হয়ে লড়াই করবে।
অনুষ্ঠানে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জাতীয় শ্রমিকশক্তি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। তিনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শ্রমিকদের প্রতি চলমান বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন।
শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বিগত বছরগুলোতে হাজারো শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা এবং দায়ীদের বিচার না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নকেও ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’র অন্যতম লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেন।