ইয়েমেনে ব্যবসায়িক অংশীদারকে হত্যার অভিযোগে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে। ভারতের এক মুসলিম ইমামের বরাত দিয়ে আজ বুধবার এই খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৮ বছর বয়সী নিমিশা প্রিয়া ভারতের কেরালার বাসিন্দা। ২০২০ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে প্রিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করেও এই দণ্ড বাতিল করা সম্ভব হয়নি। গত ১৬ জুলাই দণ্ড কার্যকরের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে ভারতের মুসলিম ধর্মীয় নেতা কান্তাপুরম এ পি আবুবকর মুসলিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হুতি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসলে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা হয়। গত সোমবার মুসলিয়ার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়—যে মৃত্যুদণ্ড পূর্বে স্থগিত করা হয়েছিল, সেটি এখন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে। সানায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অজ্ঞাতনামা সূত্র দেশটির সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর কাছে দাবি করেছে, নিমিশা প্রিয়ার মামলার বিষয়ে কিছু ব্যক্তি যে তথ্য ছড়াচ্ছেন, তা সঠিক নয়।
এর আগে চলতি মাসে ভারতের সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, ইয়েমেনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় তারা বিশেষ কিছু করতে পারছে না।
প্রিয়া ২০০৮ সালে ইয়েমেনে যান এবং দেশটির আইনি কাঠামোর আওতায় মাহদি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌথভাবে একটি ক্লিনিক চালু করেন। পরে তিনি অভিযোগ করেন, মাহদি তাঁর পাসপোর্ট আটকে রেখে মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতন চালাচ্ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি মাহদির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও করেন। এই অভিযোগে মাহদিকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তিনি মুক্তি পেয়ে হুমকি অব্যাহত রাখেন।
২০১৭ সালে মাহদিকে হত্যার অভিযোগে প্রিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে প্রমাণিত হয়, পাসপোর্ট উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি মাহদিকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেন। কিন্তু ওই চেতনানাশক অতিমাত্রায় হওয়ায় তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, হত্যার সাজা মৃত্যুদণ্ড। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার চাইলে ‘দিয়াত’ বা রক্তমূল্য গ্রহণ করে ক্ষমা করে দিতে পারে।
প্রিয়ার মা প্রেমা কুমারী গত এক বছর ধরে মেয়েকে বাঁচানোর জন্য ইয়েমেনে অবস্থান করছেন।