খুলনা মেডিকেল কলেজে সৃষ্ট পদের প্রায় অর্ধেকই শুন্য। এ কলেজটিতে ১৩টি বিষয়ে কোন অধ্যাপক নেই। ৩৫টি পদের বিপরীতে কোন সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক নেই। প্রভাষকের পদ শুন্য ৫টি। কোন কোন বিষয় শুধু প্রভাষক দিয়েই চালানো হচ্ছে। ১৯৯২ সালের অর্গানোগ্রাম দিয়ে চলছে একাডেমিক কার্যক্রম। ফলে পরিপূর্ণ শিক্ষা না পেয়েই শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে হচ্ছে।
কলেজ প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ. খ ম শফিউজ্জামান এ কলেজে গত ৩ বছর কর্মরত ছিলেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি চাকরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটিতে বর্তমানে মাত্র দু’জন প্রভাষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়ার পাশাপাশি তাদেরকেই হাসপাতালে আসা লাশের ময়না তদন্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে হয়। এ বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও ৩ জন প্রভাষকের পদ রয়েছে। এ বিভাগটি চলছে মাত্র ২ জন প্রভাষক দিয়ে। আগামী দিনে এ বিভাগ থেকে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হলে প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করার মত কেউ থাকবে না। ময়নাতদন্ত বন্ধ হয়ে যাবে।
নিজেদের অসুবিধার দিক তুলে ধরে এ বিভাগের প্রভাষক ড. ওয়াহিদ মাহমুদ বলেন, ‘লোকবল নেই। শিক্ষার্থীদের ক্লাশ, ময়না তদন্ত এবং এসব রিপোর্ট সংরক্ষন দুই-তিন জন শিক্ষকের দ্বারা সম্ভব হয় না। কোন কোন দিন ১০/১২ টি লাশেরও ময়না তদন্ত করতে হয়। এছাড়াও লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে আবার আদালতে দৌঁড়াতে হয়। ফলে সব কাজ গোছাতে হাঁফিয়ে উঠতে হয় শিক্ষকদের। এর মধ্য দিয়েই আমরা যতদুর সম্ভব শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করি’।
এ বিভাগের অপর প্রভাষক ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একজন শিক্ষকের গবেষনার প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ তথ্যটি পৌছে দিতে শিক্ষকদেরও পড়াশোনার প্রয়োজন। জনবলের অভাবে অধিকাংশ সময় সেটিও হয়ে ওঠে না’।
এমন দশা খুলনা মেডিকেল কলেজের শুধু ফরেনসিক বিভাগেই না। কলেজের ৩২ টি বিষয়েই শিক্ষক শুন্যতার এমন চিত্র। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এই কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের যথাক্রমে ২৩, ৩৫, ৪৪ এবং ৩১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক আছেন মাত্র তিনজন, সহযোগী অধ্যাপক আছেন ১৫ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯ জন ও প্রভাষক আছেন ২৬ জন। কলেজটিতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের ২০টি করে পদ শূন্য। সহকারী অধ্যাপকের ১৩টি এবং প্রভাষকের ৬টি পদ শূন্য।
কলেজ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে কলেজটির ৬টি ব্যাচে শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৬১ জন। প্রতি বছর এখানে ১৬০ জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ১৯৯২ সালে শুরু হয় ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। সেই সময়ের শিক্ষক অর্গানোগ্রাম দিয়ে এখনও চলছে এর একাডেমিক কার্যক্রম।
কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা নিয়মিত ক্লাস পান না। শিক্ষক না থাকায় অনেক সময় অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা আসেন ক্লাশ নিতে। মাঝে মধ্যে দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একসাথে ক্লাশ নেয়া হয়। প্রাকটিক্যাল ক্লাশের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। ফলে তারা ঠিকমত শিখতেও পারছে না।
সূত্রটি জানিয়েছে, ফিজিক্যাল মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি, রক্ত পরিসঞ্চালন এবং হেপাটোলজি বিষয়ে একজন করে শিক্ষকও নেই। এসব বিষয়ের জন্য কলেজ থেকে অবসরে যাওয়া শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে এসে পড়াচ্ছেন। মেডিকেলের অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, কমিউনিটি মেডিসিনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতেও শিক্ষক সংকট রয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষ মো. আবদুল আহাদ বলেন, “এই মূহুর্তে বিপাকে রয়েছি ফরেনসিক বিভাগ নিয়ে। সেখানে একজন সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে গেছেন। মাত্র দু’জন প্রভাষক দিয়ে চালাতে হচ্ছে বিভাগটি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ অধিকাংশ বিষয়গুলোতেও শিক্ষক সংকট প্রকট। শিক্ষকের চাহিদাপত্র দিয়ে প্রতিমাসেই মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়”। তিনি বলেন, ‘এখন প্রভাষকদের পদায়ন করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। বাকি অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী পদে শিক্ষকদের পদায়ন করে মন্ত্রনালয়। আবেদন করেও শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না’।