বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ দেশে ফেরত আসতে পারে, সে বিষয়ে উপদেষ্টা কোনো নির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ করেননি।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তিনি বলেন, পাচারকারীরা সব বুদ্ধি জানেন। এটা আনতে গেলে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।
উপদেষ্টা নিশ্চিত করেন যে অর্থ ফেরত আনার জন্য অনেক আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং এই আইনি প্রক্রিয়া মেনেই ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু অর্থ দেশে ফেরত আসতে পারে। বাকি অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ জোর দিয়ে বলেন, অর্থ ফেরত আনার আনুষ্ঠানিকতা কোনো সরকারই এড়িয়ে যেতে পারবে না এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনি পথ অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মনে করেন, আমি সুইস ব্যাংকে বলে দিলাম টাকা দিয়ে দাও। তারা দেবে না। তাই আইনি পথে যেতে হবে।’
বর্তমানে সরকার ১১-১২টি মামলা ‘উচ্চ অগ্রাধিকার’ দিয়ে দেখছে। পাশাপাশি যেসব মামলায় পাচার করা অর্থের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার বেশি, সেসবকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।
আগামী দিনে নতুন সরকার এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তারা রাখতে বাধ্য।
উপদেষ্টা ব্যাখ্যা করেন, এই অর্থ পুনরুদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘যে প্রক্রিয়া আমরা চালু করব, তা চালু না থাকলে টাকা ফেরত আনা যাবে না। ওরা যদি বসে থাকে, তাহলে অর্থ ফেরত আসবে না। যদি অর্থ আনতে হয়, তাহলে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে। এটাই আন্তর্জাতিক চর্চা।’
অর্থ উপদেষ্টা আরও নিশ্চিত করেন, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে ইতিমধ্যে কিছু সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সরকারের কাছে পাচারকারীদের কোথায় টাকা আছে, কোথায় হিসাব আছে, তাঁদের কোন কোন দেশের পাসপোর্ট আছে, সে-সংক্রান্ত তথ্যও রয়েছে। এখন বাকি কাজ সম্পন্ন করতে যতটুকু সময় লাগে।
এ ছাড়া দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ১০টি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবারই পুষ্টিহীনতা বা খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে—এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা পুষ্টির ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছুটা পুষ্টির ঘাটতি আছে, বিশেষ করে শিশু আর মায়েদের মধ্যে। আমরা চেষ্টা করছি যথাসম্ভব।’
উপদেষ্টা দেশের খাদ্যাভ্যাসের ভারসাম্যের অভাব তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের খাদ্য সুষম নয়। চালের ওপর বেশি নির্ভর করি। কিছু আমিষ দরকার। এ জন্য ডিম সবচেয়ে বেশি দরকার।’