অনলাইন ডেস্কঃডেঙ্গুতে প্রকোপ বাড়ছে প্রতিদিন। ঢাকা থেকে আক্রান্ত রোগীরা খুলনায় ফিরে ভর্তি হচ্ছেন সরকারীর পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। বিভাগের ১০ জেলাতেও একই চিত্র। নানা সংকটের মধ্যে চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আক্রান্তদের। সবশেষ শনিবার রাতে ও রবিবার খুলনায় স্কুল ছাত্র ও এক নারীসহ বিভাগের কুষ্টিয়ায় এক চিকিৎসক ও মাগুরায় গৃহবধূর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
খুলনা : ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মোঃ মঞ্জুর শেখ (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্র খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে মর্জিনা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আব্দুর রাজ্জাক। ডেঙ্গুতে এ দু’টি মৃত্যুই খুলনায় প্রথম ঘটনা।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন নতুন ১২৭ ও চিকিৎসাধীন ৪২১ জন ডেঙ্গু রোগী।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আনন্দ মোহন সাহা জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মনজুর শেখকে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তনি জানান, মনজুর শেখ সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় যায়নি। সে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
মৃত মঞ্জুর রূপসা উপজেলার কাজদিয়া সরকারি কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সে উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের উত্তর খাজাডাঙ্গা গ্রামের সবজি বিক্রেতা মোঃ বাবুল শেখ ওরফে বাবুর ছেলে। মঞ্জুর ২ ভাই-বোনের মধ্যে বড়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মঞ্জুর শেখ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড জ্বরে ভুগছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কিন্তু কোন উন্নতি না হওয়ায় শনিবার তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিতে বলেন। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরবর্তীতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখান থেকে ফেরত দেয়া হয়। পরে নেয়া হয় গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তির পর কয়েক ব্যাগ রক্তও দেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সে মারা যায়।সকালে মৃত মঞ্জুর শেখের বাড়ি থেকে স্থানীয় টিএসবি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথমে জ্বর হলেও কেউ বুঝতে পারেনি এটি ডেঙ্গুজ্বর। তবে, জ্বর বেশি মারাত্মক হলে তাকে শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে খুমেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যায়ে অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর মৃতের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার, স্বজন, সহপাঠি ও প্রতিবেশিদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে তার মা-বাবা মাতম করছেন। কোন সান্তনা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। স্কুল ছাত্র মনজুরের মৃত্যুর খবর শুনে তাকে শেষ বারের মতো দেখতে আসেন তার বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বনাথ ভট্টচার্য, স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর শেখ সহ তার বিদ্যালয়ের শত শত সহপাঠী। মরহুমের নামাজে জানাজা গতকাল ৪ আগস্ট দুপুরে খাজাডাঙ্গা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মর্জিনা বেগম (৬৫) মারা গেছেন। মর্জিনা বেগম দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতী গ্রামের ইসরাইল সরদারের স্ত্রী। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ পার্থ প্রতীম দেবনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মর্জিনার স্বজনরা জানান, ডেঙ্গু ছাড়াও মর্জিনা বেগম লিভার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। লিভারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিনি। সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সপ্তাহখানেক আগে খুলনায় এসে খুমেকে চিকিৎসা নেন। গত শনিবার বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন, রাতে মারা যান। এরপর খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শনিবার সকালে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কুষ্টিয়া : এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়ার চৌধুরী নুরুল নাহার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ এ কে এম কাওছার হোসেনের মেয়ে জামাই ডাঃ রাশেদুজ্জামান রিন্টুর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন তার এক আত্মীয়। ডাঃ রাশেদুজ্জামান রিন্টু চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার আনিসার মাস্টারের ছেলে।
মাগুরা : জেলার সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জয়া সাহা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার ভোরে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দুই সন্তানের মা জয়া সাহা পুটিয়া গ্রামের চঞ্চল মিত্রের স্ত্রী।
সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা জানান, মাগুরা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক গৃহবধূর মৃত্য হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে ওই রোগী মাগুরার কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নেননি।
সিভিল সার্জন আরও জানান, মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ পর্যন্ত ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতলে ২৪ জন ও মহম্মদপুর হাসপাতালে আটজন ভর্তি আছেন।