পলিনেট হাউজ আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য কৃষি প্রযুক্তি খুলনার ডুমুরিয়ায় পলিনেট হাউজ। উন্নতমানের পলি ওয়েলপেপারে আবৃত চাষযোগ্য কৃষি ঘর। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি নিয়ন্ত্রণ, অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা, ক্ষতিকর পোকার প্রবেশ রুখে দিয়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের এক আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি।
এপ্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল ফলানো যায়। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নিরাপদ ও অক্ষত রাখা যায়। পলিনেট হাউজে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় ফল-ফসল ও সবজি চারা আগাম উৎপাদন করা সম্ভব। এতে কৃষক অধিক লাভবান হয়ে থাকেন।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতি গ্রামের তাপস সরকার বলেন দিনের বেলায় সূর্যরশ্মির শতকরা ৫০ ভাগ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা এতে পলিনেট খুবই বিজ্ঞানসম্মতা নেট তাউজে সেচ ব্যবস্থাপনার ইরিগেশন সুবিধা বিদ্যমান। স্প্রিংকলার ইরিগেশন সিস্টেম পলিনেট হাউজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কোন কারণে পলিনেট হাউজে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই স্প্রিংকলার ইরিগেশন সিস্টেম সহজে এর ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এনে ফসলের উপযোগী ও স্বাভাবিক করে তোলে। আবার ড্রিপ সেচ প্রযুক্তি গাছের গোড়ায় সাশ্রয়ীভাবে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে। এতে ফসল যথাযথভাবে বেড়ে উঠে এবং ফলন আশানুরূপ হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালিদ হোসেন বলেন পলিনেট হাউজে পোকামাকড়ের আক্রমণ হওয়ার তেমন সুযোগ থাকে না। তাই বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এর ফলে বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদন নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে উচ্চমূল্যের বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজি উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য কৌশল হলো পলিনেট হাউজ।
বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার “বৃহত্তর খুলনা ডুমুরিয়াসহ দক্ষিণ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের” মাধ্যমে এ প্রযুক্তি ও কৌশল সম্প্রসারণ সফলভাবে করে যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় নির্বাচিত সফল কৃষকদের ১০ শতাংশ জমিতে পলিনেট হাউজ তৈরিসহ চলমান উৎপাদন কার্যক্রমে সব রকমের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। কৃষক এবং মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাগণের দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশি ও বিদেশী প্রশিক্ষক দ্বারা নিবিড় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পলিনেট হাউজ নির্মাণে কৃষককে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া-ই পলিনেট হাউজ প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য। যেহেতু এটি নিয়ন্ত্রিত চাষ ব্যবস্থাপনা, তাই এতে শীতের তীব্রতা, ভারী বৃষ্টি অথবা গ্রীষ্মের খরতাপজনিত ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, পলিনেট হাউজে সবসময় অনুকূল আবহাওয়া বিরাজমান রাখা যায় বিধায়, শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে, তেমনি গ্রীষ্মকালীন সবজি শীতকালে উৎপাদন করা যায়। সব ধরনের উচ্চমূল্যের ফসল চাষ এবং চারা উৎপাদন পলিনেট হাউজে করা সম্ভব। এসবের মাঝে আছে-ক্যাপসিকাপ, টমেটো, ফুলকপি, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, স্কোয়াশ, স্ট্রবেরি, মেলন, শসা, লেটুসসহ উচ্চমূল্যের নানা রকম শাকসবজি। পলিনেট হাউজে যেকোন সময় যেকোন ফসলের চারা উৎপাদনের কাজটি সহজে করা যায়। কারণ এটিতে কৃষক তার ইচ্ছা অনুযায়ী অনুকূল আবহাওয়া বিরাজমান রাখতে পারেন।
তাপ নিয়ন্ত্রণের কাজটি যেহেতু হাতের মুঠোয় সেহেতু যেকোন সময় অধিক সংখ্যক চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন। পলিনেট হাউজ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য কৃষি প্রযুক্তি।
পলিনেট হাউজের আধুনিক প্রযুক্তির সাফল্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের মাঝে ব্যাপক সারা জাগিয়েছে। কারণ, প্রকৃতির বিরূপতাকে পেছনে ফেলে কৃষক তার চাষের ইচ্ছেগুলো সাজাতে পারছেন নিজের মতো করে। এখানে ফসল চাষে নেই সময়ের বাধ্যবাধকতা, নেই প্রকৃতির বিরূপতা। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উচ্চমূল্যের ফসল চাষ এবং আগাম চারা উৎপাদনের কাজ নিশ্চিত হওয়ায় বাংলাদেশের কৃষি ক্রমে, ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার প্রাণস্পর্শে।